সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব দিতে বিধিমালা কার্যকরে উদ্যোগ

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচ বছর পর পর সম্পদের বিবরণী দাখিলের নিয়ম আছে। সম্পদ বিবরণী দাখিলের ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে সবাই নিরুৎসাহিত হবেন।সেজন্য এ সংক্রান্ত বিধিমালা কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ নিয়ম মানছেন না, এ বিষয়ে সরকারেরও কোনো তদারকি নেই। এ সংক্রান্ত বিধানটি যেন মানা হয় সে বিষয়ে তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিধিমালাটি কার্যকরের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিল ও স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির নিয়ম মানতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের কাছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রশাসনে দুর্নীতি রোধ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সরকারের নানা রকম উদ্যোগ রয়েছে। আমাদের শুদ্ধাচার কৌশল আছে। এই তাগিদের (সম্পদের হিসাব নেয়া) বিষয়টিও সেই উদ্যোগের অংশ।সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ এর বিধি ১১, ১২ ও ১৩-তে সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রয় ও সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত বিধিসমূহ কার্যকরভাবে কর্মকর্তাদের অনুসরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে জোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
এমতাবস্থায় ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর আওতাভুক্তদের তাদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/দফতর/অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত সব সরকারি কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী দাখিল, ওই সম্পদ বিবরণীর ডাটাবেজ তৈরি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে স্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও বিক্রয়ের অনুমতি গ্রহণের বিষয়ে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ এর ১১, ১২ এবং ১৩ বিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয় ওই চিঠিতে।এছাড়া সরকারি কর্মচারীর জমি/বাড়ি/ফ্ল্যাট/সম্পত্তি ক্রয় বা অর্জন ও বিক্রির অনুমতির জন্য আবেদনপত্রের নমুনা ফরম এবং বিদ্যমান সম্পদ বিবরণী দাখিলের ছকও চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।
যদিও এর আগে ২০১৯ সালে নতুন মন্ত্রী আসার পর ভূমি মন্ত্রণালয় ও অধীন দফতর/সংস্থার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়া হয়েছিল। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হওয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নিতে পারেনি ভূমি মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব ভূমি সেবা দিতে অন্যতম কৌশল হিসেবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়ার ঘোষণা দেন।ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সব দফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নির্দেশ জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থার ১৭ হাজার ৫৭৬ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ১৭ হাজার ২০৮ সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করে। বিভাগীয় মামলায় সাময়িক বরখাস্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে থাকার কারণে ৩৬৮ জন কর্মচারী সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে পারেননি।
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ‘আমরা প্রথমে তাগিদ দিয়ে চিঠি দিলাম। কিছুদিনের মধ্যে সময় বেঁধে দেয়া হবে। আমরা সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়টি নিয়মিত কাজের অংশ করে নিতে চাই। কেউ চাকরি জীবনে এলে, অন্যান্য কাজের মতো সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়টি তার রুটিন দায়িত্বের মধ্যে থাকবে। এটা হলে কর্মকর্তারা তার সম্পদের বিষয়ে আপডেটেড থাকবেন।’
‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর ‘মূল্যবান স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়’ উপ-শিরোনামের ১১ বিধিতে বলা হয়েছে, ‘প্রকৃত ব্যবসায়ীর সহিত সরল বিশ্বাসে লেনদেনের ক্ষেত্র ব্যতিরেকে একজন সরকারী কর্মচারী তাহার কর্মস্থল, জেলা বা যে স্থানীয় এলাকার জন্য তিনি নিয়োজিত, ওই এলাকায় বসবাসকারী, স্থাবর সম্পত্তির অধিকারী অথবা ব্যবসা বাণিজ্যরত কোনো ব্যক্তির নিকট ১৫ (পনের) হাজার টাকার অধিক মূল্যের কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয় বা অন্য কোনো পন্থায় হস্তান্তর করিতে চাহিলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, বিভাগীয় প্রধান বা সরকারের সচিবের নিকট নিজের এ অভিপ্রায় ব্যক্ত করিবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিজেই বিভাগীয় প্রধান হইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে এবং সরকারের সচিব হইলে সংস্থাপন (জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে সরকারের নিকট অভিপ্রায় জানাইবেন। উক্ত অভিপ্রায়ের বক্তব্যে লেনদেনের কারণ ও স্থিরকৃত মূল্যসহ লেনদেনের সম্পূর্ণ বিবরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতিতে হস্তান্তর করা হইলে, উক্ত হস্তান্তরের পদ্ধতি উল্লেখসহ লেনদেনের সম্পূর্ণ বিবরণ থাকিবে। অতঃপর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কাজ করিবেন।’
প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাহার অথবা তাহার পরিবারের সদস্যদের মালিকাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি এবং মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলঙ্কারাদিসহ সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের নিকট ঘোষণা দিতে হইবে এবং উক্ত ঘোষণায় নিম্নোক্ত বিষয়াদির উল্লেখ থাকিবে-
(এ) যে জেলায় সম্পত্তি অবস্থিত উক্ত জেলার নাম,
(বি) পঞ্চাশ হাজার টাকার অধিক মূল্যের প্রত্যেক প্রকারের অলঙ্কারাদি পৃথকভাবে প্রদর্শন করিতে হইবে, এবং
(সি) সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশের মাধ্যমে আরও যেই সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়।