মুশফিকের আয়নাতে মলিন টি-২০

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ছবি: সংগৃহীতবাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ছবি: সংগৃহীত
অবকাঠামো নেই কিন্তু সমর্থকদের বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনা, সম্ভাবনাকে পুঁজি করে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। বর্তমান সময়েও বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় শক্তি সমর্থকরা। টাইগারদের জয়ে তারা বাঁধনহারা আনন্দে ভাসেন, আবার পরাজয়ে হতাশ পুড়েন। সমালোচনায় মুখর হন। গ্যালারিতে প্রাণের জোয়ার তোলেন।
কিন্তু এবার টি-২০ বিশ্বকাপে গোটা জাতিকেই রাজ্যের হতাশা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দল। সুপার-১২ পর্বে কোনো ম্যাচই জিতেনি মাহমুদউল্লাহর দল। তার মাঝেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর কথার তীরে মুশফিকুর রহিম বিদ্ধ করেছেন দলের সমর্থক, সমালোচকদের। সমালোচনার আগে ‘আয়না’তে মুখ দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যা দেশব্যাপী সবাইকে আহত করেছে।
যদিও বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ‘ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক ছিলেন ব্যর্থ। ৮ ম্যাচে তিনি করেছেন ১৪৪ রান, গড় ২০.৫৭, স্ট্রাইক রেট ১১৩.৩৮। প্রত্যাশার দাবি মেটাতে পারেননি। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র একটি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৫৭ রান।
সবচেয়ে জঘন্য ছিল তার ব্যাটিংয়ের ধরন। ক্রিকেটীয় প্রথাগত শটসে তিনি আউট হয়েছেন কমই। বিশ্বকাপে বারবারই স্কুপ, রিভার্স সুইপ খেলে উইকেট বিলিয়েছেন মুশফিক। এমন দায়িত্বজ্ঞান হীন আচরণ তার মতো সিনিয়র ব্যাটসম্যানের কাছে কখনোই কাম্য ছিল না। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে ‘বালকসুলভ’ শটস খেলে দলকে ডুবিয়েছেন তিনি। অবশ্য বিশ্বকাপের আগেও এ ফরম্যাটে ছন্দে ছিল না মুশফিকের ব্যাট। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫ ম্যাচে করেছিলেন ৩৯ রান।
টি-২০ ফরম্যাটটাই যেন অচেনা মুশফিকের কাছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ওয়ানডে, টেস্টে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষুদে ফরম্যাটে বরাবরই তিনি আনাড়ি। ২০০৬ সালে দেশের প্রথম টি-২০ তে খেলেছিলেন তিনি। তারপর বিশ্বকাপ পর্যন্ত ৯৯টি ম্যাচ খেলেছেন। সবকটি বিশ্বকাপেও অংশ নিয়েছেন। কিন্তু এখনও টি-২০ তে পায়ের তলায় মাটি নেই এ ব্যাটসম্যানের। সংগ্রামের প্রতিমূর্তি যেন মুশফিক। ৯৯ ম্যাচ খেলে গত ১৫ বছরে তার ব্যাটিং গড় ১৯.৭৯! রান করেছেন ১ হাজার ৪৬৫, হাফ সেঞ্চুরি ছয়টি। এমন বিবর্ণ পরিসংখ্যানের পরও টি-২০ তে বহাল তবিয়তে ৩৪ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, টি-২০ তে মুশফিকের প্রয়োজনীয়তা আর কতটা রয়েছে? মিডল অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যর্থ তিনি। অভিজ্ঞতা থাকলেও কার্যকর নন তিনি, দলের দাবিও মেটাতে পারেন না। উল্টো দলকে বিপদে ফেলেন ‘গোয়াতুর্মি মার্কা’ শট খেলে। কারণ রিভার্স সুইপ, স্কুপ নিয়ে যতবারই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ততবারই মুশফিক জোর গলায় বলেছেন, এটি তার স্কোরিং শটস। অথচ এই শট খেলতে গিয়েই তার ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটছে বারবার।
এখন তাই মুশফিককেই ‘আয়না’য় মুখ দেখার পরামর্শ দিচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আয়নাবাজি নিয়ে সমালোচনামুখর সবাই। হয়তো নিজের টি-২০ ক্যারিয়ারের অস্তাচলের ছবিটাই এখন ভাসছে তার আয়নায়।
অবশ্য এমন ব্যর্থ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দলে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস রয়েছে। কিন্তু সেখানেও নাকি অভিজ্ঞতার ‘জোরে’ মুশফিককে রেখে দেয়ার চিন্তা চলছে। সেটা যে ভালো কিছু বয়ে আনবে না দেশের জন্য, তা সহজেই অনুমেয়।
মিডল অর্ডারে মুশফিক জায়গা ধরে রাখায় তরুণরা সুযোগ পাচ্ছে না। এক বছর পরই বিশ্বকাপের আরেকটি আসর বসবে। এতকিছুর পরও ৩৪ বছরের মুশফিক যদি নিজের আয়নায় সেই বিশ্বকাপ দেখতে পান, তবে তা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যই বলতে হবে।