রোনালদোর দেশে নতুন স্বপ্ন বুনছেন আফগান নারী ফুটবলার

বয়সটা তার স্বপ্ন দেখার, হেসে-খেলে বেড়াবার। কিন্তু ১৫ বছর বয়সী সারাহকে জীবনের ভয়ে জন্মভূমি আফগানিস্তান ছাড়তে হয়েছে। দেশ ছাড়ার কষ্ট প্রবল হলেও এখন পর্তুগালে অন্তত নিজেকে নিরাপদ অনুভব করছেন তিনি। সেখানেই এখন পেশাদার ফুটবলার হওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন এই কিশোরী।
সম্ভব হলে সময়ের সেরা ফুটবলারদের একজন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে একদিন দেখা করতে চান সারাহ।
কট্টর ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান অগাস্টে ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দলের অনেক খেলোয়াড় দেশ ছাড়েন। সারাহ তাদেরই একজন। তাদের আশ্রয় দিয়েছে পর্তুগাল।
লিসবনের তাগুস নদীর তীরে ল্যান্ডমার্ক বেলেম টাওয়ারে মা ও সতীর্থদের সঙ্গে সম্প্রতি ঘুরতে গিয়েছিলেন সারাহ। সেখানেই রয়টার্সকে তিনি বলেন তার স্বপ্নের কথা।
লিসবনের ল্যান্ডমার্ক বেলেম টাওয়ারের সামনে কিশোরী ফুটবলার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফারখুন্দা মুহতাজ। ছবি: রয়টার্সলিসবনের ল্যান্ডমার্ক বেলেম টাওয়ারের সামনে কিশোরী ফুটবলার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফারখুন্দা মুহতাজ। ছবি: রয়টার্স“এখন আমি মুক্ত। আমার স্বপ্ন রোনালদোর মতো একজন ভালো খেলোয়াড় হওয়া। পাশাপাশি পর্তুগালে একজন বড় ব্যবসায়ী হতে চাই।”
সারাহর আশা, একদিন আবার মাতৃভূমিতে ফিরে যাবেন। তবে অবশ্যই সেখানে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার পাওয়া গেলেই। তার মা অবশ্য আফগানিস্তানে ফেরার বাস্তবিক তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখেন না। ১৯৯৬-২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের আগের শাসনামল দেখেছেন তিনি আর সেই তেতো অভিজ্ঞতা থেকেই তার এই আশঙ্কা। তিনি এতটাই ভীত যে রয়টার্স প্রতিবেদককে তাদের নামের পদবী লিখতে মানা করেন।
তালেবান নেতারা ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই নারী অধিকারকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। তাদের কাজে এর তেমন কোনো প্রমাণ মিলছে না। তাদের প্রথমবারের শাসনামলে মেয়েদের শিক্ষা বা চাকরির ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা। পুরুষের লিখিত অনুমতি নিয়ে সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরে, তবেই নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারত।
তালেবান ১৫ অগাস্ট রাজধানী কাবুলের দখল নেওয়ার পর তাদের ঊর্ধ্বতন এক নেতা বলেছিলেন, মেয়েদের হয়তো খেলাধুলা করার অনুমতি দেওয়া হবে না, কারণ এটি ‘প্রয়োজনীয় নয়’ এবং তাদের মুখ ও শরীর ঢাকা থাকবে না।
আফগান নারী ফুটবলারদের পর্তুগালে সরিয়ে নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন আফগানিস্তানের সিনিয়র নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ফারখুন্দা মুহতাজ। তাদের চমকে দিতে বুধবার লিসবনে যান তিনি। মুহতাজ ব্যাখ্যা করলেন মেয়েদের সেখানে সরিয়ে নেওয়ার কারণ।
“আমরা যে কারণে এই পদক্ষেপ (নারী ফুটবলারদের সরিয়ে নেওয়া) নিয়েছিলাম তা হলো এটা নিশ্চিত করা যেন, তারা নিজেদের ভালোবাসার খেলাটি খেলতে পারে।”
মুহতাজদের সহায়তায় নারী খেলোয়াড় ও পরিবারের সদস্যসহ মোট ৮০ জন পর্তুগালে আশ্রয় নিয়েছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারা পর্তুগালে পৌঁছান।
বুধবার রাতে মুহতাজকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে নারী ফুটবলাররা। তাকে জড়িয়ে ধরেন তারা। কেউ কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
“তারা অনেক, অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে। তারা খুব শক্ত ছিল এবং এখানে আসতে পেরেছে”- বলেন মুহতাজ।
তাদের একজন আত্মীয় ২৫ বছর বয়সী জাকি রাসা স্মরণ করলেন কাবুল বিমানবন্দরের দুর্বিষহ সেই সময়ের কথা। যেখানে তিনি ‘উদ্বেগজনক’ তিনটা দিন কাটিয়েছিলেন। এখন পর্তুগালে থাকতে পেরে তিনি খুশি। চালিয়ে যেতে চান পড়াশোনা।
“ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা এখন নিরাপদ।”