দেশে ১৭ কোটি মোবাইল ফোন ও ১১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী: মোস্তফা জব্বার

বাংলাদেশে এখন ১৭ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী। এবং ১১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। রয়েছে গ্রাম পর্যন্ত ফাইবার ক্যাবল সংযোগ। সাইবার সিকিউরিটি সামিট ২০২১ এর ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ সব কথা বলেন।
গত ২২ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার সময় সাইবার সিকিউরিটি সামিট ২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। টানা ২৮ ঘন্টার সাইবার সিকিউরিটি আন্তর্জাতিক এ সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা যে কোনো ইস্যু হতে পারে এটা আগে কেউ চিন্তা করতো না। তার কারণ বাংলাদেশ ইতিপূর্বে তিনটি শিল্পবিল্পব মিস করছে। সরকারের দক্ষ পদক্ষেপের কারণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মিস কর নাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দেশে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ এখণ সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল ফাইনান্স সিস্টেম থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তর হচ্ছে। যে বাংলাদেশ সম্পূন্ন কৃষি ভিত্তিক ছিলো, সেই বাংলাদেশ কিন্তু এখন বিশ্বের ৮০টা দেশকে সফটওয়্যার রপ্তানী করে। এই বাংলাদেশ কিন্তু শুধু চাহিদা মতো সফটওয়ার বানাতেই পারে না, এটা সুরক্ষা দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও রয়েছে। আমাদের দেশের মেধা দিয়েই আমার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সৃষ্ট সংকটগুলো অতিক্রম করতে পারবো এটা আমার বিশ্বাস।
আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে সময় লাগছে। আমাদের দেশে দক্ষ মানুষ তৈরি করতে হবে যারা আমাদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে। আমাদের দেশের জনগন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভালো ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের কোনো সংকট আমরাই মোকাবেলা করতে পারবো বলে জানান মোস্তাফা জব্বার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে বাংলাদেশে ৫জি প্রযুক্তি চালু হবে। ৫জি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়েই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা ৫জি পরীক্ষামূলক চালু করবো। আর ২০২২ সালে এর সুফল সারাদেশের মানুষ উপভোগ করতে পারবে।
বাংলাদেশে এ আয়োজনটি খুবই দরকারি একটি বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ আজ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। বাংলা এখন শুধু জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম ভাষাই নয়। বাংলা এখন যেকোনো প্রযুক্তি সেক্টরে ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যবহারের জন্য সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলা ভাষায় গ্রহনযোগ্য বাড়ছে। বাংলাভাষায় এখন ডোমেইন আছে। তাই বাংলাভাষাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, সাইবার সিকিউরিটি সামিট ২০২১ একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় করা হচ্ছে। যখন সারাবিশ্ব সাইবার আক্রমনের ঝুঁকিতে। সাইবার আক্রমনের ঝুঁকি থেকে আমাদের মুক্ত থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। সাইবার সিকিউরিটি সামিট ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করবে।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। এ সময় তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি প্রতিটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ বিষয়টি কোনো সাধারণ বিষয় না। এটি দেশের জন্য খুবই জরুরী। তাই প্রতিটি দেশের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাইবার সিকিউরিটির ত্রুটির কারণে দেশের অর্থনৈতিক ভাবে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই সাইবার সুরক্ষায় বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদেরর দেশে সাইবার আক্রমনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো সাইবার সিকিউরিটি বিষয় অনেক সুরক্ষিত। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার আক্রমন হয়েছিলো। এতে দেশের বড় ক্ষতি হয়েছিলো। হ্যাকাররা আস্তে আস্তে দক্ষতার সঙ্গে সাইবার আক্রমনগুলো করে থাকে।
সাইবার সিকিউরিটি সামিট ২০২১ সম্পর্কে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সাইবার সিকিউরিটি। বিশ্বের বড় বড় দেশে এ সমস্যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকাও রাশিয়াকে তার দেশে সাইবার হামলা না করার অনুরোধ করেছে।বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।এখন সন্ত্রাসবাদে মানুষ ভয় পায় না। এখন বেশি ভাগ দেশ ও মানুষ ভয় পায় সাইবার ক্রাইম নিয়ে। তাই সবাইকে সাইবার সিকিউরিটি বিষয় আরো বেশি সচেতন হতে হবে। আগামী দিনে পৃথিবীতে যদি কোনো যুদ্ধ হয় সেটা হবে সাইবার যুদ্ধ। তখন কোনো পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হবে না। যুদ্ধ হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ সামিটের মাধ্যমে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাসহ সবাই সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আরো ভালো ভাবে জানতে পারবে। এ সামিটের পরে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা তৈরি হবে। এবং তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা দিতে পারবেন।
বেকারত্ব দুর করতে সামিট কিভাবে সাহায্য করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে, সামিটে ৮টি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ট্রেনিংগুলো করাবেন বিশ্বের সেরা সাইবার সিকিউরিটি বিশেষঙ্গরা। এ সেশনগুলো থেকে আমাদের দেশের বেকাররা উপকৃত হতে পারবেন। শুধু বেকাররাই না আমাদের দেশের শিক্ষার্থী, যারা পড়াশোনার শেষ করে চাকরির বাজারের প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের জন্য এ ট্রেনিং সেশনগুলো কাজে দিবে।
ব্যবহারকারীরা কিভাবে সাইবার হামলা থেকে মুক্ত থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলেনের জানানো হয়, অনেকেই প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার কথা ভালো ভাবে জানে না। তারা কিভাবে তাদের তথ্য বা লেখা নিরাপদ রাখবে সে বিষয়ে তাদের তেমন জ্ঞান নাই। সাইবার সিকিউরিটি সামিটের এ বিষয় বিভিন্ন আলোচনা করা হবে। এ আলোচনা সাংবাদিকসহ সব শ্রেণীর মানুষের কাছে দিবে বলে আমার বিশ্বাস। এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয় শিক্ষার্থীরা সাইবার সিকিউরিটি সামিটের বিনামূল্যে অংশ নিতে পারবেন।
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর রাতে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে টানা ২৮ ঘন্টার সাইবার সিকিউরিটি সামিটের বিস্তারিত তুলে ধরার হয়। শুরুতেই লিখিত বক্তব্যে মাধ্যমে আয়োজন সম্পর্কে তুলে ধরেন সাইবার সিকিউরিটি সামিট ২০২১ এর কনভেনার অ্যাডাম তানজিল।
আয়োজনে ৫০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক বক্তা অংশগ্রহণ করবেন। টানা ২৮ ঘন্টার এ আয়োজনে ২০টির বেশি দেশের ৫ হাজার থেকে থেকে ৮ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী অনলাইনে যুক্ত হবে। বৈশ্বিক সাইবার হুমকির সুরক্ষা, সনাক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়া জানতে বাংলাদেশে সরকার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো এ সামিটে অংশ নিবে।