রাজনৈতিক শৃংখলা, প্রতিযোগিতামূলক স্বচ্ছ রাজনীতি এবং স্বচ্ছ নির্বাচন
মুঃ আবদুল হাকিম
রাজনীতি একটি মহান এবং মহিমান্বিত পেশা। রাজনীতি শুধু রাজনীতিকদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। প্রশাসন শুধু প্রশাসকদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। বিচার শুধু বিচারকের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। আইন শুধু আইনজীবীদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। অর্থনীতি শুধু অর্থনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। অর্থাৎ কাওকে জবাবদিহিতা বা আইনের বাইরে রাখা সমীচীন নয়। লোভ লালসা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনখারাপি, ঘৃণা, উগ্র চিন্তাচেতনা, সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিহিংসা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখার জন্য পেশাটিকে একটি শক্ত নৈতিক এবং আইনগত ভিত্তির উপর দাঁড় করতে হবে। ১৯৭২ সনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন অথবা নতুন Political Act প্রণয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে শৃংখলা , স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে হবে।রাজনীতিকদের হাতে গোটা বিশ্ব এবং রাষ্ট্র পরিচালনার চাবি।রাজনীতিকরা চাইলে এ পৃথিবী যেকোনো মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে পারে। রাজনীতিকদের যেমন ভাল কাজের হাজার হাজার নজির আছে তেমনি খারাপ কাজেরও হাজার হাজার নজির আছে। আবার এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে পৃথিবীর অনেক শুভ পরিবর্তনের মহানায়কের জন্ম হয়েছে রাজনীতি থেকে।রাজনীতির মাধ্যমে মানুষ নিজের এবং দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দ্যাখে।
রাজনৈতিক বায়ুমণ্ডল নষ্ট হলে মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে না কিংবা সুস্থ থাকতে পারে না। যেহেতু সংবিধান এবং ১৯৭২ সনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এদেশে একদলীয় শাসনের কোনো অবকাশ নেই সেহেতু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে পারস্পারিক আস্থাভিত্তিক সর্বদলীয় সমঝোতা খুব জরুরি। এ পারস্পারিক আস্থাভিত্তিক সর্বদলীয় সমঝোতা দশ বারোটা সংলাপ দিয়ে কোনোক্রমেই অর্জিত হবেনা।সকল সামাজিক শক্তিকে এর সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত এবং সমন্বিত করতে হবে।দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় সমঝোতার ব্যাকগ্রাউণ্ড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে যদি তাদের পূর্ণমাত্রায় একাডেমিক স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। তাহলে ইতিহাসবিদগণও ইতিহাস বিকৃতিরোধে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে পারে। জ্ঞান ও সনদ বিতরণের বৃত্তে আবদ্ধ না থেকে সৃজনশীল এবং মুক্ত উচ্চশিক্ষা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসংঘাত রূপান্তরের কারিগর হিসেবে কাজ করতে পারে। হেরে যাওয়া যদি অবধারিত মৃত্যু হয় তাহলে রাজনীতিতে কেউ হারতে চাইবেনা। সবাই জিততে চাইবে যা কোনোদিন সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় রাজনীতিতে মতৈক্য স্থাপন অসম্ভব।পরাজয়ের পর বিরোধীদল যেন বিলুপ্ত হয়ে না যায়
তার জন্য সংবিধানে একটা স্পেস রাখতে হবে। একদলীয় বা দ্বিদলীয় নয় রাজনীতি হবে বহুদলীয় যাতে নাগরিক সবচেয়ে ভালটা বেছে নিতে পারে। অনেক গুলো না থাকলে বাছাই করার সুযোগ থাকে না। তা না হলে রাজনীতি প্রতিযোগিতামূলক হবে না। সর্বদলীয় সমঝোতা সৃষ্টি হলে সর্বদলীয় সরকার গঠন অনেকটা সহজ হয়ে যেতে পারে।
১৯৭২ সনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০খ(১)(খ)(ই) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারি বা শ্রমিকদের সমন্বয়ে বা অন্যকোনো পেশার সদস্যগণের সমন্বয়ে সহযোগী বা অংগসংগঠন থাকবে না।তবে শর্ত থাকে যে তাদের স্বস্বক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হবার বা সংগঠন, সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি গঠন করবার ও বর্ণিত সকল প্রকার গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক অধিকার করবার ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যমান আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলের সদস্য হবার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। ১৯৭০ সনেও দি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার এবং আইউব খানের আমলে এবডো নামে অনুরূপ আইন ছিল। আইনগুলো আমজনতার কাছে বোধগম্য করার জন্য খুব সহজ করে লেখা হয় না। কারণ আইনে প্যাঁচ না থাকলে আদালতে বিতর্ক জমেনা এবং সাধারণ মানুষ উকিলের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনা। আইনটির সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায় শিক্ষক, ছাত্র, সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারি , শ্রমিক বা অন্য কোনো পেশাজীবীদের সমন্বয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো সহযোগী বা অংগ সংগঠন থাকবে না। তবে তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে পেশাগত দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য স্বাধীনভাবে ও গণতান্ত্রিকভাবে সংগঠন করতে পারবে এবং ব্যক্তি হিসেবে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে তাদের কোনো বাধা নেই। এ আইন থেকে এটা পরিস্কার যে কোনো পেশাজীবী সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের সহযোগী বা অংগ সংগঠন নয়। এগুলো পেশাগত দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য স্বাধীন সংগঠন। কিন্ত বাস্তবে এগুলো বিভিন্ন দলের সহযোগী বা অংগসংগঠন হিসেবে কাজ করছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে এসব সংগঠনের পেশাগত দাবি দাওয়া আদায়ে কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। অথচ আইনটির সুযোগ নিয়ে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করার জন্য কতিপয় ব্যক্তি সংগঠনগুলোর সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে। পেশাজীবীরা এখান থেকে কিছুই পাচ্ছে না।
সংবিধানের নিম্নবর্ণিত একটি মাত্র অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন কি কাজ করবে তা বলা আছে। অনুচ্ছেদ ১১৯(১) রাষ্ট্রপতিপদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান , নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণএবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী
(ক) রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।
(খ) সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।
(গ) সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে এবং
(ঘ) রাষ্ট্রপতি পদের এবং সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটারতালিকা প্রস্তুত করবে।
(২) উপরিউক্ত দফা সমূহে নির্ধারিত দায়িত্ব সমূহের অতিরিক্ত যে রূপ দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্যকোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে নির্বাচন কমিশন সেরূপ দায়িত্ব পালন করবে। যেমন স্থানীয় সরকার আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের কাজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় আসনের জন্য সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন। সংসদ আইন করে অন্যান্য সকল নির্বাচনের অতিরিক্ত দায়িত্ব ও নির্বাচন কমিশনকে অর্পণ করতে পারে।
সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচন, জেলা বার এসোসিয়েশনের নির্বাচন, এফবিসিসিআই নির্বাচন, জেলা চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন, ব্যবসায়ী সমিতিসমূহের নির্বাচন, প্রেসক্লাবসমূহের নির্বাচন, অফিসার্স ক্লাব, গুলশান ক্লাব,ধানমন্ডি ক্লাব,উত্তরা ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ইত্যাদির নির্বাচন, শিক্ষক সমিতিসমূহের নির্বাচন, ক্যাডার অফিসার্স সমিতিসমূহের নির্বাচন, জেলা সমিতি সমূহের নির্বাচন , কৃষিবিদদের নির্বাচন, ডাক্তারদের নির্বাচন, প্রকৌশলীদের নির্বাচন, ছাত্রদের নির্বাচন, শ্রমিককদের নির্বাচন, কৃষকদের নির্বাচন এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের উপর অর্পণ করা যায়। কেননা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় এসব নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। অনুসন্ধানে জানা যাবে একজন ব্যক্তি যুগ যুগ ধরে নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে আছে। সর্বক্ষেত্রে শত ভাগ গণতন্ত্রায়ন না হলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা দুষ্কর। এমনকি রাজনৈতিক দলসমূহের নেতৃত্ব নির্বাচন করার দায়িত্ব ও নির্বাচন কমিশনকে অর্পণ করা যেতে পারে।
রাজনীতিতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার সাংবিধানিক বা অন্যকোনো আইনী ম্যান্ডেট নির্বাচন কমিশনের না থাকা সত্ত্বেও Doctrine of Necessity সূত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং সিভিল সমাজের লোকজনদের সাথে সংলাপের আয়োজন করেছে। অন্যান্য পেশাজীবীদের সাথে সংলাপের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এই সাংবিধানিক বা আইনী ম্যাণ্ডেট রাজনৈতিক কমিশনকে অর্পণ করা যেতে পারে।রাজনীতির ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ম্যাণ্ডেট নয়- নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ম্যাণ্ডেট নির্বাচন ব্যবস্থাপনা। এমতাবস্থায় রাজনীতি ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা একটি রাজনৈতিক কমিশন দরকার । এ কমিশন রাজনীতিতে পারস্পারিক আস্থা ভিত্তিক সর্বদলীয় সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।সকল প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করা যেতে পারে নির্বাচন কমিশনকে যাতে কেউ নেতৃত্ব কুক্ষিগত করতে না পারে। সুযোগের সমতা সৃষ্টি করে সবাইকে নেতৃত্বে সমাসীন হওয়ার পথটা নিষ্কণ্টক করতে হবে। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের রাজনীতিতে উচ্চশিক্ষিত,মেধাবী এবং নৈতিকভাবে উন্নত লোকের বিপুল সমাবেশ ঘটাতেপারি নি। দুয়েকটা উচ্চশিক্ষিত এবং মেধাবী লোক এখানে প্রবেশ করলেও হয় টিকতে পারছেনা অথবা টিকতে পারলেও নেতৃত্ব পাচ্ছে না। কেনো টিকতে পারছেনা বা নেতৃত্ব পাচ্ছেনা তাগ ভীরভাবে ভাবনাচিন্তার বিষয় । বাস্তবতা হল অনেক টাকা এবং পেশিশক্তি ছাড়া রাজনীতিতে টেকা যায় না। নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শের চর্চা দিয়ে এখানে টেকা দায়।একশ্রেণীর রাজনীতিকেরা এটা কে লোভ লালসা বাস্তবায়নের হাতিয়ার মনে করতে শুরু করেছে । রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ইশতেহার, রাজনৈতিক তহবিল গঠন, রাজনৈতিক কর্মী সংগ্রহ,অংগ বা সহযোগী সংগঠন তৈরী, রাজনৈতিক অফিস ব্যবস্থাপনা ,প্রপাগান্ডা, পাবলিসিটি, নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা রাজনৈতিক আইন এবং একটা রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ তৈরীর প্রয়োজনীয়তা আছে। এ কর্তৃপক্ষ তৈরি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সিভিল সমাজ এবং সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের সমন্বয়ে। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের একটাপ লিটিক্যাল একাডেমি থাকবে।গত পঞ্চাশ বছরে জ্ঞানএবং নীতিভিত্তিক রাজনীতি গঠনে দেশের সমাজ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা ছিল না। আগামি পঞ্চাশ বছরে রাজনৈতিক কমিশন গঠনের মাধ্যমে সর্বদলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে একটি সুস্থ, পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ এবং বিশুদ্ধ রাজনীতি গঠনের একটা সুযোগ তাদের দেয়া যেতে পারে।রাজনৈতিক কমিশনের তত্ত্বাবধানে দেশের সমাজবিদ এবং রাষ্ট্রবিদগণ সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করবে। দেশের সকল পেশার মানুষকে সমন্বিত করার মাধ্যমে। এভাবে অগ্রসর হলে সর্বদলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্যমান সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সংবিধান রচনা অসম্ভব না ও হতে পারে।
সরকারি কর্মচারি আইন, সেনাবাহিনী আইন, বিমান বাহিনী আইন, নৌবাহিনী আইন, পুলিশ আইন ইত্যাদির মত একটি রাজনৈতিক আইন প্রণয়ন রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার জন্য খুব জরুরি।শুধু নির্বাচন কমিশন একা এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। এজন্য আলাদা একটি রাজনৈতিক কমিশনের প্রয়োজন আছে। আবার শুধু জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয় সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের দায়িত্বও নির্বাচন কমিশন কে নিতে হবে।অর্থাৎ রাষ্ট্রের সকল স্তরে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। এটা না করলে রাষ্ট্রের অশুভ শক্তির সিণ্ডিকেশন বা স্বার্থান্বেষী মহল কেউ ভাংতে পারবে না। রাষ্ট্র গঠন বা নির্মাণের গবেষণার সূচনা হবে সমাজ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানেরপাঠশালায়।
দেশে বেশি বেশি নির্দলীয় সংগঠন তৈরী করতে হবে। এসব রাজনীতি ও শুদ্ধাচারের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে কোনদলীয় রাজনীতি করবে না। এর আওতায় স্বাধীন Institute of Political Ideologies থাকবে এবং পলিটিক্যাল একাডেমি থাকবে। যেখানে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক মতাদর্শগুলো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ চূড়ান্ত নয়। এগুলো পরিচ্ছন্ন এবং হাল নাগাদ করার জন্য এই ইনস্টিটিউট কাজ করবে। সবার জন্য রাজনীতি উন্মুক্ত থাকবে না।শুধু ক্লীন ইমেজের লোকজন রাজনীতি করবে।সর্বদলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিকে সংস্কার করতে হবে। একটি আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লীন ইমেজের লোকজন বাছাই করতেহবে। রাজনীতি করার জন্য ন্যূনতম কিছু স্টান্ডার্ড ঠিক করতে হবে।
বর্তমান রাজনীতি জনগণের সমস্যাগুলোর ফলপ্রসূ সমাধানে আশানুরূপ অবদান রাখছে না। রাজনীতির কোন ফেমওয়ার্ক না থাকায় রাজনীতিকদের জবাব দিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।তাদের উপর গোটা জাতির সুখ দুঃখ এবং ভাগ্য নির্ভর করছে।রাজনীতিকরাই এ দেশের ভাগ্য বিধাতা। রাজনীতিতে যাতে নীতিহীন,চরিত্রহীন,মেধাহীন, নষ্ট, ভ্রষ্ট,দুর্নীতিপরায়ণ,সন্ত্রাসী, ঋণ খেলাপি এবং বিদেশে অর্থ পাচারকারী ব্যক্তিবর্গ ঢুকতে না পারে তার প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে হবে। ।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হল ক্রিমিন্যালদের মধ্যে মতৈক্য স্থাপন করার গুণটা থাকলেওএদেশের জ্ঞানী গুণীরা মতানৈক্যবিলাসী। জ্ঞান চর্চা করতে গিয়ে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে জন কল্যাণে কোনো বিষয়ে মতৈক্যে উপনীত হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। গতানুগতিক রাজনীতি দিয়ে সমাজের কোন পরিবর্তন হবে না। রাজনৈতিক সংস্কারের প্রথম ধাপ হবে পেশাজীবি সংগঠনগুলো নির্দলীয় করা। ধর্মীয় ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন গুলো নির্দলীয়করা। ধর্ম নিয়ে কেউ রাজনীতি করতে চাইলে তাকে অবশ্যই সংবিধানের মৌলিক কাঠামো মোতাবেক উদার ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মেনে নিতেহবে। রাজনীতিকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং জাগতিক ইস্যু গুলোর মধ্যে সীমিত রাখা।সমাজবিজ্ঞান সমিতিগুলো সংহত এবং শক্তিশালী করা। সমাজ বিজ্ঞান চর্চাকে বিজ্ঞান চর্চা থেকে পৃথক করা। পৃথক ক্যাম্পাসের মাধ্যমেসমাজ বিজ্ঞানকে একটি লাইভ সায়েন্স হিসেবে অনুশীলন করা।এগুলো হবে Social Diagonistic Lab, Think Tank, Institutes of Public Policy, Institutes of Judicial Studies, Institutes of Criminal Studies এবং Institutes of Corruption Studies। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলো নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করলেই চমৎকার সমাধান বেরিয়ে আসবে। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ খুন হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা ঘটছে। লক্ষ লক্ষ দুর্নীতি হচ্ছে। এগুলো নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে সমাধানের অনেক উপায় এবং সূত্র খুঁজে বের করা যাবে। আমরা এসব ঘটনাবলীর কোন রেকর্ড নির্মাণ করছি না। মূহুর্তের জন্য বিব্রত বা বিচলিত হচ্ছি।আবার ভুলেও যাচ্ছি। আমাদের অপরাধগুলোর কোন পরিসংখ্যান বা ইতিহাস প্রস্তুত করছিনা। কেবলমাত্র হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোটের রায়গুলোর রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মতাদর্শ ইহজাগতিক একটি বিষয়। এটা পরজাগতিক কোনো বিষয় নয়। কিংবা এটি ধর্মের কোন বিকল্প নয়। এটি পারত্রিক কোন বিষয়কে স্পর্শ করে না। রাজনীতিতে ধর্ম আমদানি করলে কনসেন্সাস নির্মাণপ্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। আবার কনসেন্সাস না হলে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় না।রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে আমাদের গবেষণা খুবই অপ্রতুল।দেশে ব্যাঙের ছাতা বা পানের দোকানের মত কেউ যেন কোনো দল খুলতে না পারে তার জন্য একটা ফ্রেম ওয়ার্ক দরকার। দলের রাজনৈতিককমিশন অনুমোদিত একটা মতাদর্শ থাকবে যা পৃথিবীর আর কোনো দলের থাকবে না। দলের কর্মীদের একটা ডেটাবেইজ থাকতে হবে। দল গঠনের জন্য স্বচ্ছ তহবিল থাকতে হবে। দলে কোনো অপরাধ বা সন্ত্রাস বা দুর্নীতির রেকর্ড থাকবে না। দল কোনো ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে পারবে না । রাজনৈতিক কমিশনের অনুমোদন নিয়ে দল করতে হবে। রাজনৈতিক কমিশন দলের কর্মকান্ড পরিবীক্ষণ এবং অডিট করে একটা বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। কমিশন যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দল ব্যতীত সর্বদলীয় ফোরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তসাপেক্ষে যে কোনো দলকে ব্যান করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ দল নাগরিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। নাগরিক আদালত এক্ষেত্রে সাংবিধানিক এবং মানবাধিকার আদালত হিসেবে কাজ করবে। সর্বদলীয় ফোরামের কাছে কমিশন নিজের গ্রহণযোগ্যতা,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রমাণ করবে যাতে জনমনে এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি কেউ ছড়াতে না পারে।