অস্ট্রেলিয়াকে ৬২ রানে থামিয়ে টি-টোয়েন্টি রানের দিক থেকে নিজেদের দ্বিতীয় বড় জয় পেল বাংলাদেশ

সিরিজ খোয়ানোর পর ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ম্যাচে জিতে পায় প্রথম জয়ের স্বাদ। টানা চার ম্যাচ একই একাদশ নিয়ে খেলা বাংলাদেশ এনেছে দুটি পরিবর্তন। চোটের জন্য পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় দলে আসলেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। শামীম হোসেনের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন। টানা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। অনুমিতভাবে তিনি নিয়েছেন ব্যাটিং। মিলিত চেষ্টায় লড়াই করার মতো একটা সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। সেটাতে যথেষ্টর বেশি বলে প্রমাণ করলেন বোলাররা। নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে গিয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে সফরকারীরা। ব্যাট-বলে-ফিল্ডিংয়ে নিজেদের মেলে ধরে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১২৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬২ রানে গুটিয়ে যায় দলটি। বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৬০ রানে। আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা টাইগাররা শেষ করে ৪-১ ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়াকে ৬২ রানে থামিয়ে টি-টোয়েন্টি রানের দিক থেকে নিজেদের দ্বিতীয় বড় জয় পেল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে রানের দিক থেকে এটি অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম বড় পরাজয়। সবচেয়ে বড় হারটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
আগের ম্যাচে খরুচে বোলিং করা সাকিব এবার মাত্র ৯ রান দিয়ে নিলেন ৪ উইকেট। সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে সাইফ ৩ উইকেট পেলেন ১২ রানে।
তিন রানের জন্য চতুর্থ উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। আগের ওভারে জোড়া উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন পেলেন আরেকটি উইকেট। বোল্ড করে দিলেন অ্যাশটন অ্যাগারকে। সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের জবাব যেন জানা ছিল না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের। ১৯ বলের মধ্যে মাত্র ৯ রান যোগ করতে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলল সফরকারীরা।
সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে বাজে বল করা সাকিব আল হাসান এদিন ফিরেছেন রাজার মতো। ৩.৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রান খরচ করে একটি মেডেনসহ ৪টি উইকেট তুলে নেন। ফলে ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কারও তিনি হাতে তোলেন।
ম্যাথু ওয়েডকে ফিরিয়ে মাইল ফলকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। পরের উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাঁহাতি এই স্পিনারকে। অ্যাশটন টার্নারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি পেলেন একশ উইকেটের স্বাদ। মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে ১০০তম উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এনিয়ে ৮৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১০২ উইকেট পেলেন সাকিব। টি-টোয়েন্টিতে সাকিব বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। সমান ৮৪ ম্যাচে ১০৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন সাবেক শ্রীলঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা।বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজার রান ও ১’শ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করলেন বাংলাদেশি এ অলরাউন্ডার।
প্রথম বলে দারুণ ফিল্ডিংয়ে তিনটি রান বাঁচান নাসুম আহমেদ। পরের বলে দ্রুত গতিতে বলের কাছে গিয়ে সিঙ্গেলেই থামিয়ে রাখেন আফিফ হোসেন। পরের বলেই মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন পেলেন উইকেট, বোল্ড হয়ে গেলেন অ্যালেক্স কেয়ারি।আক্রমণে এসে তৃতীয় বলে ছক্কা হজম করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এক বল পরেই ফিরিয়ে দেন বেন ম্যাকডারমটকে। এক ছক্কায় ১৬ বলে ১৭ রান করেন ম্যাকডারমট।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেন করলেন ক্রিস্টিয়ান। প্রথম ৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দুইজন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুটি উইকেটই নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। আগের ম্যাচে তিনে নেমে ঝড় তুললেও এবার ওপেন করে তা পারলেন না ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান। বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দিলেন নাসুম আহমেদ।
এর আগে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ সৌম্য সরকার চারে নেমে সিরিজে প্রথমবার গেলেন দুই অঙ্কে। কিন্তু ব্যর্থ হলেন ইনিংস গড়তে। টানা চার ম্যাচে ব্যর্থ সৌম্য সরকার জায়গা ধরে রেখেছেন দলে। তবে ওপেনিংয়ে তাকে খেলাচ্ছে না বাংলাদেশ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের জায়গায় মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করছেন মেহেদি হাসান। আগের ওভারে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর কিছুক্ষণ ঝুঁকি না নিলেও চলতো। তবুও নিলেন, লং অফ দিয়ে উড়িয়ে সীমানা পারের চেষ্টায় ধরা পড়লেন সীমানায়। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা মাহমুদউল্লাহ টিকলেন না বেশিক্ষণ। অ্যাশটন অ্যাগারকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এক ছক্কায় ১৪ বলে ১৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। সেই ওভারে অ্যাগারকে ছক্কায় ওড়ান সৌম্য সরকার। অ্যাডাম জ্যাম্পার সোজা বলের লাইন মিস করে শেষ হলো সাকিব আল হাসানের ভোগান্তি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
এছাড়া সিরিজে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চিনিয়েছেন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। মাত্র ৩ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়েই নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট। দারুণ বোলিং করেছেন নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসানও।