টিকা বাণিজ্য ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত রবিউল অবশেষে বরখাস্ত

টিকা বাণিজ্য ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা প্রদানের অভিযোগে অভিযুক্ত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেনকে ঘটনার তিন দিন পর সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে টিকা নিরাপত্তার ‘কোল্ড বক্স’ ছাড়াই টিকা স্থানান্তর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড জালিয়াতিসহ সরকারি তদন্তে ধরা পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘হুইপ বাহিনীর’ করা টিকা বাণিজ্য। গতকাল হুইপ সামশুল হকের আর্শীবাদপুষ্ট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউলের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, অনুমতি ছাড়া ও যথাযথ নিয়ম না মেনে দেওয়া হয় ২৬শ’ টিকা। দুইদিনে দেওয়া ২৬শ’ টিকার উপস্থাপিত রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মধ্যে অন্তত ২২শ’ কার্ডই ভুয়া। অনুমতি ছাড়াই এই টিকাদান প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য সহকারীর মতোই হুইপ সামশুলের ভাই মহব্বত নিজেই টিকা পুশ করেছেন টিকা প্রত্যাশীদের।
প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণকৃত স্থিরচিত্রে দেখা যায়, রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় সিরিঞ্জ হাতে হুইপের ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত টিকাদান করছেন। প্রশিক্ষিতস্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দায়িত্বশীল কেউ না হয়েও তিনি কিভাবে এই দায়িত্ব নিলেন- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, টিকা নিরাপত্তার ‘কোল্ড বক্স’ ছাড়াই টিকা স্থানান্তর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড জালিয়াতিসহ সরকারি তদন্তে ধরা পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘হুইপ বাহিনীর’ করা টিকা বাণিজ্যের অভিযোগে ধারণ করা উপজেলার সরকারি টিকা সংরক্ষণাগারের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, অনুমোদন না নিয়ে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির বাড়ি লাগোয়া একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে টিকাগুলো দেওয়া হয়। তদন্তকালে অভিযুক্ত হইপপোষ্য কথিত ছাত্রলীগ নেতা ও ইপিআই কর্মসূচির টেকনোলজিস্ট রবিউল হুসাইন তদন্ত টিমকে মোট ২৬শ’ টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড উপস্থাপন করেন। কার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট বারকোড পরখ করে ধরা পড়েছে ভিন্নতা। ২৬শ’ কার্ডের মধ্যে দুই শতাধিক কার্ড পুরনো রেজিস্ট্রেশনকৃত।
সরকারি নির্দেশনা না মেনে বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রতিরোধী টিকা নিয়ে এমন কাণ্ডে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত রবিউল হোসাইন প্রথম পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রমে অবশিষ্ট থাকা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০০ টিকা নয় ছয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হুইপ সামশুলের আনুগত্যে থাকার কারণে বিভিন্ন অনিয়ম করেও পার পেয়ে যান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার গণটিকা কার্যক্রম শুরুর আগেই ঘটা করে ব্যানার লাগিয়ে এ ধরনের ঘটনা নিয়মবহির্ভূত। এটা হুইপ হিসেবে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়া সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের ইউনিয়নে এ কার্যক্রম আয়োজন, অন্য ইউনিয়নের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ বলে মত দেন অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ও ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য সহকারী রবিউল সিনোফার্ম এর টিকা সরিয়ে নিয়ে হুইপের নির্দেশে এলাকার লোকজনকে দেওয়া শুরু করেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. অজয় দাশকে কমিটির প্রধান করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. নুরুল হায়দার ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খানকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে দুই কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে করোনার টিকাদানের ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে।