টি২০ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম হারিয়ে আক্ষেপও ঘুচল : প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো টি২০ ম্যাচে হারাল বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে উইকেট নিয়ে কত রহস্য! জল্পনাও জমে উঠল বেশ। মিরপুরের সেই বরাবরের মন্থর, নিচু বাউন্সের উইকেট। টার্নও মিলল যথেষ্ট। অস্ট্রেলিয়ার অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপের জন্য তা হয়ে উঠল বধ্যভূমি। আপন আঙিনায় চেনা ২২ গজে রাজত্ব করল বাংলাদেশের স্পিনাররা। ধরা দিল কাঙ্ক্ষিত এক জয়।অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়লাভ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, কোচ ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টি-টোয়েন্টিতে এটি মোটামুটি বড় ব্যবধানের জয়। অথচ বাংলাদেশের পুঁজি ছিল মোটে ১৩১ রানের। গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর স্টেডিয়ামে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-২০ পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ২৩ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর প্রথম স্বাদ পেল দেশ। একইসাথে সবচেয়ে কম পুঁজি নিয়ে জয়ের রেকর্ডও গড়েছে টাইগাররা। টেস্টে ৬ ম্যাচে একটি ও ওয়ানডেতে ২১ ম্যাচে একটি জয় রয়েছে অসিদের বিপক্ষে। জয় ছিল না শুধু টি২০ সংস্করণে। এবার সেই আক্ষেপও ঘুচল।
নিশ্চিয়ই আনন্দে ভাসছে বাংলাদেশ, খুশিতে উড়ছেন মাহমুদউল্লাহ? অধিনায়ক বললেন, তেমন কিছু নয়। এটা স্রেফ আরেকটা জয়। পিঠাপিঠি ম্যাচ বলে, খুব দ্রুত প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নেওয়াই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তার কাছে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাহমুদউল্লাহ জানান, এরই মধ্যে পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন তারা। এই জয়ে আমরা ভেসে যাচ্ছি না। আমরা জিতেছি, এটা এখানেই শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন পরের ম্যাচে মনোযোগ দেওয়া। এই ম্যাচে যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, নিশ্চিত করা। প্রথম বল থেকে সেরাটা দেওয়া। পা মাটিতে রেখে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া।
১৩২ রান তাড়া করতে নেমে স্বাগতিকদের অনবদ্য বোলিংয়ের মুখে ২০তম ওভারের শেষ বলে ১০৮ রানে অলআউট হয়ে যায় অসিরা। ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় স্পিনার নাসুম আহমেদ। এছাড়া মেহেদী হাসান (১/২২), সাকিব আল হাসান (১/২৪), মুস্তাফিজুর রহমান (২/১৬) ও শরিফুল ইসলামরা (২/১৯) প্রত্যেকেই দুর্দান্ত বোলিং করে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখেন।
১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। কার্যকর বোলিং উপহার দেন অন্য দুই স্পিনার মেহেদি হাসান ও সাকিব আল হাসানও। এত অল্প পুঁজি নিয়েও কীভাবে জিতল বাংলাদেশ? ম্যাচ শেষে এমন প্রশ্নের জবাবে নাসুম বলেছেন, আমাদের টার্গেট ছিল ডট বল করতে। চেয়েছি রান চেক দিয়ে বল করে যেতে এবং এভাবেই আমরা উইকেটও পেয়েছি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক নাসুম। ক্যারিয়ারের পঞ্চম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ এই বাঁহাতি স্পিনার। দ্বিতীয় বলেই ছক্কা। পরের বলে আরও দুই রান। নাসুম আহমেদ প্রমাদ গুনলেন। এরকম হতে থাকলে বিপদ! তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলেন সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার বুঝিয়ে দিলেন এই উইকেটের আদর্শ লেংথ। নাসুম মেনে চললেন সেই ধারাপাত। তাতে ধরা দিল সাফল্য। জিতলেন তিনি নিজে, জিতল দল। আমাদের লক্ষ্য ছিল রান চেক দিয়ে বল করা, ডট বল করা। ওটাই চেষ্টা করেছি, উইকেট পেয়ে গেছি।রিয়াদ ভাই ও সাকিব ভাই, দুজন মিলে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন, যখনই বোলিং করতে গিয়েছি, আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি সেভাবেই করার চেষ্টা করেছি।
ব্যাটিংয়ে ১০ রানের ঘাটতির কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ দলনায়ক মাহমুদউল্লাহ বললেন, ইনিংস শেষে আমাদের টিম মিটিংয়ে কথা উঠল, আমাদের ১০ রানের ঘাটতি। কাজেই আমাদের ফিল্ডিং ভালো করতে হবে। দলের মধ্যে যে ক্ষুধা আর চেতনা দেখছি তা অবিশ্বাস্য। বোলাররা তাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে। শুরুতেই বল হাতে আগ্রাসী মানসিকতা দেখাতে হবে, আমরা সেটাই করেছি। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। জিতেছি, এটা এখানেই শেষ। এখন পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবার সময়। এ ম্যাচে আমরা যে ভুলগুলো করেছি তা আগামীকাল (আজ) আর করতে চাই না। শুরু থেকেই সেরাটা খেলতে চাইব, আর আমাদের পা মাটিতেই থাকবে।
আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অস্ট্রেলিয়ার দলনায়ক ম্যাথু ওয়েড। অস্ট্রেলিয়ার নিখুঁত বোলিংয়ের মুখে ৭ উইকেটে ১৩১ রানের সাদামাটা সংগ্রহ গড়তে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ৩৩ বলে ৩৬, মোহাম্মদ নাইম শেখ ২৯ বলে ৩০, আফিফ হোসেন ১৭ বলে ২৩ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ২০ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলেন। মাঝ বিরতির সমীকরণ যেমনই থাকুক, বাংলাদেশ তা নিজেদের করে নেয় ক্রমেই। শেষ পর্যন্ত যখন ধরা দিল জয়, অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার হারানোর উচ্ছ্বাস-উদযাপনেও দেখা গেল না বাঁধনহারা কিছু। শেষের বেশ আগেই যে আসলে ম্যাচ শেষ!
বোলারদের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়েও জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। পরাজয় শেষে অতিথি দলের অধিনায়ক ওয়েড হতাশা নিয়ে বললেন, বোলাররা অনবদ্য কাজ করেছে। এ রান চেজ করাই যেত। ১০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দরকার ছিল ইনিংসটা মেরামত করার, যা আমি ও মিচ (মিচেল মার্শ) চেষ্টা করেছি, যদিও আমাদের পরিকল্পনা কাজে আসেনি। ১০০ কিংবা তার কাছাকাছি অলআউট হওয়াটা সব সময়ই হতাশাজনক, কাজেই ভালো স্কোরের উপায় বের করতে হবে। আমরা তো আগেই জানতাম, তারা আমাদের বিপক্ষে অনেক স্পিন করবে, কাজেই আমাদের ১৩০ রান করার উপায় বের করা উচিত ছিল।
শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার তাড়ায় টাইয়ের স্লোয়ারে ক্যাচ দেন নুরুল হাসান সোহান, স্টার্কের নিখুঁত ইয়র্কারে বোল্ড শামীম হোসেন। বাংলাদেশ ১৩০ ছাড়াতে পারে মূলত আফিফ হোসেনের সৌজন্যে। ১৭ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন তরুণ এই বাঁহাতি, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা হয়ে ওঠে মহামূল্য।