রোববার থেকে খুলছে রপ্তানিমুখী কারখানা : করোনা-ডেঙ্গু বেড়েই চলেছে

 প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন   |   রাজনীতি



করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে কোরবানি ঈদের পরদিন ২৩ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে শিল্প কারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়। আজ শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী কারখানাকে রোববার সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতাবর্হিভূত রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এর অর্থ দাড়ায় চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে ১ অগাস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। 
তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের শিল্প কারখানা খুলে দিতে সরকারের উচ্চ মহলে বারবার অনুরোধ করছিলেন শিল্পমালিকরা।  সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এতদিন শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে অনড় ছিল সরকার। বৃহস্পতিবার তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবারও অনুরোধ জানান। আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা, সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়া, বন্দরে জট, সার্বিক অর্থনীতিসহ সবকিছু বিবেচনা নিয়েই তারা এ অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছেন। এদিন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ঢাকা চেম্বারের নেতারা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে এক বৈঠকে এই অনুরোধ জানান। ঈদের আগের লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিল্প কারখানা চালু ছিল।

কারখানা খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের পর বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন,  আগামী ১ আগস্ট থেকে চালু হতে যাওয়া দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা কর্মস্থলে (কারখানা এলাকায়) থাকা শ্রমিকদের দিয়েই চালু করা হবে। লকডাউন শিথিল হলে গ্রামে থাকা শ্রমিকরা কর্মস্থলে আসার পরে পুরোদমে কারখানা চলবে। এখন শুধু রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলোর রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলবে। অধিকাংশ কারখানার শ্রমিক কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন। আপাতত তাদেরকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হবে। এর মধ্যে যারা বাড়ি চলে গেছেন, এসব শ্রমিক যদি আসতে পারেন তাহলে চলে আসবেন। এই কয়েকদিনের জন্য কারও চাকরি যাবে না, বেতন কাটা যাবে না। তবে সম্ভব হলে শ্রমিকরা অবশ্যই ফ্যাক্টরিতে চলে আসবেন।


করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ৫ আগস্টের পরও কঠোর বিধিনিষধ বহালের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। (৩০ জুলাই) অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‌‘আমরা কেবিনেট মিটিংয়ে বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি।’ এর মধ্যেই ব্যবসায়ীদের অনুরোধে রফতানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়া হলো। খুরশীদ আলম বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অন্তত ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ রেখে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছিল। “শিল্প কারখানা খুলে দিলে গ্রাম থেকে শ্রমিকরা আসবে। গ্রামেও এখন সংক্রমণ অনেক বেশি। তারা আসবে এবং সংক্রমণ ছড়াবেই। ঢাকায় এখন হাসপাতালে সিট ফাঁকা নেই। আরও ক্রাইসিস হবেই, আপনারাই তখন বলবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু করে নাই। 

করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনটি জলবসন্তের মতই সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আগের ধরনগুলোর চেয়েও গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটাচ্ছে বলে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের এক নথিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরন টিকাপ্রাপ্ত এবং টিকাহীন সবার মাধ্যমেই প্রায় সমানভাবে ছড়াতে পারে।  টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে জনগণকে বার্তা পৌঁছানোর পদ্ধতি ঢেলে সাজাতে হবে, কারণ অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনটি প্রায় নতুন একটি করোনাভাইরাসের মত আচরণ করছে, এ ধরনটি এমনকি ইবোলা বা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের চেয়েও দ্রুততায় একজন থেকে আরেকজনে ছড়াচ্ছে। আর এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে টিকা নেওয়ার কোনো বিকল্প আপাতত নেই।


দেশে করোনাভাইরাসের পাশাপাশি বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে আরও ১৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (৩০ জুলাই) সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 
এ বছর এখন পর্যন্ত (গত ১ জানুয়ারি থেকে আজ ২৯ জুলাই) হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৬২ জন। একই সময়ে তাদের মধ্য থেকে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৭৪৯ জন রোগী।


 

রাজনীতি এর আরও খবর: