এক দিনে রেকর্ড ২৬৪ মৃত্যু : দেশে শনাক্তের ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের মধ্যে আরও ২৬৪ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত এক দিনে মারা যাওয়া ২৬৪ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ২১ হাজার ৯০২ জনে পৌঁছাল। এর আগে ২৭ জুলাই এক দিনে ২৫৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল, সেই রেকর্ড ১০ দিনও টিকল না।২ ৪ ঘণ্টায় সারা দেশে প্রায় ৪৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আরও ১২ হাজার ৭৪৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৩ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এর উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার জানান, দেশে জুলাই মাসে কোভিডে আক্রান্ত ৩০০ জনের নমুনা থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন।
মোট ৩০০ কোভিড পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। চলতি বছরের ২৯ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। যেহেতু কোনো বয়সসীমাই কোভিড-১৯ এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণের ‘ঝুঁকি নেই’- এমনটা বলা যাচ্ছে না। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মত ‘কো-মরবিডিটি’ রয়েছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি বলে গবেষণায় দেখা গেছে। কোভিড-১৯ এর জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরণ এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোমের সাথে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশে কোভিড-১৯ জিনোম ডাটাবেইজ তৈরি করাই এ গবেষণার লক্ষ্য।অন্য অনেক ভাইরাসের মতো নতুন করোনাভাইরাসও ক্রমাগত রূপ বদল করে চলছে। এর মধ্যে গত বছর ভারতে এর যে পরিবর্তিত একটি রূপ শনাক্ত হয়, তা নাম দেওয়া হয় ডেল্টা।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনটি জলবসন্তের মতই সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আগের ধরনগুলোর চেয়েও গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটাচ্ছে বলে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের এক নথিতে। সিডিসির অভ্যন্তরীণ একটি বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডে এই নতুন তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, কর্মকর্তাদের এটা স্বীকার করে নিতে হবে যে ‘লড়াইটা বদলে গেছে’। নতুন গবেষণার ফলের বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে। অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনটি প্রায় নতুন একটি করোনাভাইরাসের মত আচরণ করছে, এ ধরনটি এমনকি ইবোলা বা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের চেয়েও দ্রুততায় একজন থেকে আরেকজনে ছড়াচ্ছে। আর এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে টিকা নেওয়ার কোনো বিকল্প আপাতত নেই। সিডিসির গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা পাওয়া কোনো ব্যক্তি যদি ডেল্টা ধরনে সংক্রমিত হন, তিনিও টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের সমপরিমাণ ভাইরাস দেহে বহন করেন। তবে একইসঙ্গে এটাও স্বীকার করে নিতে হবে যে টিকা নেওয়ার পরেও লোকজন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিছুটা অসুস্থ হতে পারে, এবং টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। জনগণ টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনার খবর জানলে টিকার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে। সে কারণে রোগ প্রতিরোধের বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সিডিসির নথিতে। কিন্তু এই নতুন গবেষণা টিকার মাধ্যমে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের লক্ষ্যটি আরও কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করছেন সংক্রামক-ব্যাধি বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ইসরায়েল এবং জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের কোভিড-১৯ টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধনী দেশগুলোকে বুস্টার ডোজ দেওয়া স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।বুস্টার ডোজ দেওয়া স্থগিত করা হলে প্রতিটি দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা দেওয়ার ব্যবধান কমিয়ে আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অত্যন্ত জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে শিশু-কিশোরদের টিকা না দিয়ে সেসব ডোজ দরিদ্র দেশগুলোর কাছে পৌঁছে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ‘কোভ্যাক্স’কে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।