এক সময় নিজেই রক্তদান করতাম: শোকাবহ আগস্টের রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
রোগীর জীবন বাঁচাতে এক সময় নিজেই রক্তদান করতেন তবে বয়সের কারণে এখন আর পারেন না জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার (০১ আগস্ট) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমন্ডির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত ‘স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচি’র উদ্বোধন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাইকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় আমরা সবাই মিলেই রক্তদান করতাম। তবে হ্যাঁ বয়সের ভারে এখন আর দিতে পারি না। কারণ ৫৬ বছর বয়স হয়ে গেলে তার রক্ত আর নেয় না। তার আগে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পরে এ রক্তদান কর্মসূচি যখন শুরু করি, প্রতি বছর রক্তদান করেছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিতে শিখেছি, রক্ত আরও দিবো, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। ’ রক্ত কিন্তু তিনি নিজেও দিয়ে গেছেন। যখন এদেশের মানুষকে মুক্ত করেছেন, তখনই যেন যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল বা আমাদের বিজয় চায়নি, তারাই কিন্তু তাকে হত্যা করে গেছে। তার রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। কাজেই আমরা অন্তত এ রক্তদানের মাধ্যমে একটি মুমূর্ষ রোগী যদি বাঁচাতে পারি, সেটাই তো সব থেকে বড় কথা যে মানব কল্যাণে আপনি দান করছেন। আর এতে নিজের কোনো ক্ষতি হয় না, বরং উপকার হয়। জাতির পিতাকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ধাপে ধাপে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন কিন্তু পাকিস্তানী শাসক চক্র বা এ দেশেরও কিছু পাকিস্তানী দালাল চক্র বা তাদের খোশামোদী, তোষামোদীকারী, পদলেহনকারী কিছু গোষ্ঠী বাঙালির এই অভ্যুদ্যয় বা বিজয়কে কখনও মেনে নিতে পারেনি।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা একদিন ঠিকই আবিষ্কার হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যেন কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তবে আমার অবাক লাগে যে, এর সঙ্গে আমাদের যারা তারা কি করে জড়িত থাকল? হত্যার বিচার করেছি। তবে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা সেটা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে সেটা একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে এটা ঠিক।”
“তাই পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কি করেছে সেদিকে আমি না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।”
“বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হল পাকিস্তানের অনেক চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদসহ অনেকেই বলেছিলেন বাংলাদেশ তাদের কাছে একটা বোঝা ছিল। কারণ এই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেশি, ক্ষুধার্ত..বাংলাদেশ সব ধরনে অনগ্রসর। কাজেই এটা নাকি পাকিস্তানের জন্য বোঝা। তারাও ভেবেছিল এই বাংলাদেশ কোনোদিন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর প্রান্তে এই সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।