বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ

 প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২১, ০২:২০ অপরাহ্ন   |   জাতীয়


বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার সাংবিধানিক এবং আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার ইমেইলযোগে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, না হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন নোটিশদাতারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, পরিকল্পনা সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
 মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, বজ্রপাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষত কৃষক ও জেলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। বজ্রপাতে হতাহত এড়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ইতিমধ্যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বজ্রপাতের ফলে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। 

বজ্রপাতে নিহতের ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই কৃষক। হাওর এলাকা বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধায় দেশের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা এখন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সাইক্লোন, বন্যা, ভূমিধসে নিহত সংখ্যার চেয়ে বেশি। 

 সরকার যদিও বজ্রপাতকে ২০১৬ সাল থেকে একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে ঘোষণা করেছে। তথাপি বজ্রপাতের ফলে হতাহতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত গৃহীত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। নোটিশে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ এবং বজ্রপাতে হতাহতের সংখা কমাতে আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এবং অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ :  বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্রপাতি স্থাপন ,হাওয়ার-বাওর এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি, আগাম সতর্কতামূলক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি,  পাম গাছ রোপণ, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ,এবং বজ্রপাত থেকে বাঁচার বিভিন্ন কৌশল লিফলেট আকারে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বিতরণ করা।


বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়: প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরােধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন। এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন।  কালাে মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডােবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।  ঘন কালাে মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাহির হবেন না; অতি জরুরি প্রয়ােজনে রবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হতে পারেন।  বজ্রপাতের সময় খােলা জায়গা, খােলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না।  বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খােলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন।  যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।  উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুটি, মােবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।  বজ্রপাতের সময় মােবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলাে বন্ধ রাখুন। বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।  বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযােগ ঘটাবেন না; সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনাে কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। 
  বজ্রপাতের সময় শিশুদের খােলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।   বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।  বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়ােজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।







জাতীয় এর আরও খবর: