টিকার আওতায় ১ কোটি ৫ লাখ মানুষ : বেড়েছে আইসিইউর চাহিদা
স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি ব্যাপক ভিত্তিক টিকাদানের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গণহারে টিকাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টিকাদান বাড়িয়ে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২ কোটি ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৮২০ ডোজ। এরমধ্যে এক কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা সরকারের কেনা। বাকিটা উপহারের।আগামী সাত আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনতে চায় সরকার। সেই হিসাবে ১৩ কোটি ৫২ লাখ ৮ হাজার মানুষকে টিকা দিতে হবে। সেজন্য দুই ডোজের টিকার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ২৭ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার ৬০০ ডোজ।
এক কোটি ৫ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন মানুষ এখন টিকার আওতায় আসছে। এছাড়া দেশে এখন টিকা মজুদ আছে ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ২০০ ডোজ। এরমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ ও মর্ডানার ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা আছে। সরকার জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা ৭ কোটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেক্ষেত্রে মোট টিকার প্রয়োজন হতে পারে ২০ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার ৬০০ ডোজ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের মানুষের জন্য ২১ কোটি টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা যে বিভিন্ন ভ্যাকসিন অর্ডার করেছি এবং প্রতিশ্রুতি পেয়েছি তার সংখ্যা ২১ কোটি। এর মধ্যে চায়নার ৩ কোটি, ৩ কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা, কোভ্যাক্সের ৭ কোটি, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ১ কোটি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির ৭ কোটি, এগুলো পর্যায়ক্রমে আগামী বছরের শুরুর মধ্যে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সামনে কেনা ও উপহারের আরো টিকা দেশে আসছে। টিকা নিয়ে কোন ধরনের ধরনের সমস্যা হবে না।
দেশে গত ২১ জানুয়ারি প্রথম আসে ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা। তার ঠিক চারদিন পর আসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড। পরে দ্বিতীয় চালানে ভারত থেকে কেনা ২০ লাখ ডোজ টিকা আসে। ২৬ মার্চের পর টিকার আর কোনও চালান ভারত থেকে আসেনি। এরপর দেশে চীনের তৈরি সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ৫ লাখ ডোজ দেশটির সরকার উপহার হিসেবে পাঠায় গত ১২ মে। এখন পর্যন্ত উপহার এবং কেনা টিকাসহ মোট ৫১ লাখ ডোজ এসেছে। এরমধ্যে সিনোফার্মের উপহারের আছে ১১ লাখ ডোজ টিকা।
৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু করবে সরকার বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। পরে ধাপে ধাপে বয়সের সীমা নামিয়ে অন্য রোহিঙ্গাদেরও করোনার টিকা দেওয়া হবে। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের যে টিকা দেওয়া হবে, একই ধরনের টিকা পাবে রোহিঙ্গারাও। আমাদের যেগুলো আছে, তা থেকে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা হবে না।’
করোনা রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে আইসিইউর চাহিদা। করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, একজন রোগীর মৃত্যুর পরই কেবল আইসিইউ বেড পাচ্ছে অপেক্ষারত রোগীদের কেউ কেউ।
তবে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেই একই চিত্র। কোথাও নেই আইসিইউ বেড। একটি আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে।
দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের জন্য নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর রয়েছে মাত্র ৩৩টি। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে ২২টি, ভোলা জেলায় ছয়টি এবং পটুয়াখালীতে পাঁচটি। বিভাগের একমাত্র শের-ই-বাংলা ভরসাস্থল হওয়ায় সেখানকার ৩০০ বেডের সবগুলোতেই মুমূর্ষু রোগী ভর্তি থাকছে। সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা নেওয়া মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটছে বিপর্যয়।
খুলনার পাঁচটি হাসপাতালে ৫০টি আইসিইউসহ ৫১৫টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ২০টি, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি এবং বেসরকারি অপর দুটি হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ রয়েছে। গত পাঁচ দিনে খুলনার পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রামে নগরীতে সরকারি হাসপাতালে ৪৩টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১১৯টি আইসিইউ বেড থাকলেও এর একটিও ফাঁকা নেই। অন্যদিকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে সরকারি ১২টি ও বেসরকারি ১৪টি হাসপাতালে।
রাজশাহী বিভাগের তিন হাসপাতালে মোট আইসিইউর সংখ্যা ৫৮টি। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ২০টি। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০টি, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, বগুড়ায় আটটি এবং ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।
রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা ফাঁকা নেই। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ৯১টির। এর মধ্যে ৯০টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করে সাড়ে ৪০০-এ উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা ২০টি। তবু আইসিইউ শয্যার সংকট রয়েই গেছে। একজন মুমূর্ষু রোগীর স্বজন জানান, সারা দিন অপেক্ষায় আছেন আইসিইউ শয্যার জন্য। খালি না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার ভাইকে আইসিইউ শয্যায় স্থানান্তর করতে পারছেন না।
সিলেটে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে কোভিড চিকিৎসার জন্য রয়েছে প্রায় ৮০০ শয্যা। আইসিইউ শয্যা ১২১টি। এর মধ্যে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ৮৪টি সাধারণ ও ১৬টি আইসিইউ, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ড মিলে ১৬৫টি সাধারণ ও আটটি আইসিইউ, খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১টি করে সাধারণ আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।