‘হাসপাতালে সিট বুকড, ডাক্তার-নার্সরাও ক্লান্ত : এরপরও বেড়েছে মানুষের চলাচল!
ঈদের পর ফের ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের চতুর্থ দিনে রাজধানীর চিত্র দেখা গেছে একটু ভিন্ন রকম। মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল থাকলেও সড়কে বেড়েছ মানুষের চলাচল। কোথাও কোথাও মানুষের জটলাও দেখা গেছে। ভিন্ন কোম্পানির নকল স্টিকার ব্যবহার করে গাড়িতে চড়ে গুনতে হয়েছে জরিমানা। অকারণে বের হয়ে পর্যাপ্ত কারণ না দেখাতে পারায় অনেকেই আটক হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। আজ সোমবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। অনেকেই অফিসগামী আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে ঢাকা প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেলে সিঙ্গেল চড়ার কথা থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বেড় হয়েছেন তাদের অনেকে গাড়িতে একাধিক চড়তে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়ম অমান্য করায় অনেকেই গুনতে হয়েছে জরিমানা। এছাড়া অকারণে বের হয়ে আটক হয়েছে অনেকেই।
রাজধানী শাহবাগে দেখা যায়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রতিটি গাড়িকে চেক করে ছাড়া হচ্ছে। আর যারা অজুহাত দেখাচ্ছেন সেখানেও গুনতে হচ্ছে জরিমানা কিংবা আটক।
শাহবাগে চেক পোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাধারণ যারা ঘর থেকে বের হয়েছে তাদের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা নানা কাজে বের হয়েছেন। যদি অকারণে বের হচ্ছেন কিংবা পর্যাপ্ত কারণ দেখাতে না পারছে আমরা তাদেরকে আটক করছি, জরিমানা করছি। এছাড়া অনেকে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির নামে স্টিকার ব্যবহার করে এমনি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন।
রাষ্ট্রের সক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। হাসপাতালে ৯০ শতাংশ সিট প্রায় বুকড হয়ে গেছে। ডাক্তার-নার্সরাও ক্লান্ত হয়ে গেছেন। অর্থনীতি বাঁচাতে হলে বাঁচাতে হবে। বাঁচতে হলে ‘লকডাউন’ মানতে হবে। ভ্যাকসিন নিতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু আমরা খুব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ‘লকডাউনে’র তিন-চার দিন চলছে, কিন্তু রাস্তাঘাটে যেভাবে মানুষ চলাফেরা করছে, যেভাবে গাড়ি চলাচল করছে, আমরা তাতে খুবই দুঃখিত। আজ সোমবার (২৬ জুলাই) ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যতদূর পারি করে যাব। বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টার আগামী শনি বা রোববার চালু করব। তারপর কোনটা চালু করব? এরপর তো অবস্থা নাই যে আমরা একটা হাসপাতাল স্থাপন করব। ডাক্তার-নার্সরাও ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তারা আর কত কাজ করবেন। দেড় বছর ধরে, তারা আর কত কাজ করবেন,‘আমরা অনুরোধ করব, জনগণকে একটু সচেতন করার, বয়স্ক যারা আছে, তারা যাতে ভ্যাকসিন নেয়, টেস্ট করায় এবং যেখানে সংক্রমিত হচ্ছে, সেখানে না যায়,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম জোরদার করা। এখন আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা লেভেলে বেশি জোরদার করবো। সেটা যেন ওয়ার্ড থেকে শুরু হয়ে যায়। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা। ওয়ার্ডে যে সব বয়সের লোকেরা আছেন তাদেরকে ভ্যাকসিনেটেড করার ব্যবস্থা করা।
পাশাপাশি যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার আছে, পুলিশ, আর্মি, ডাক্তার, নার্স, গণমাধ্যমকর্মী। বাকি যারা আছেন তাদেরকে এবং তাদের পরিবার এবং পরিবারে যদি কেউ ড্রাইভারও থাকে তাকেও দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ফ্রন্টলাইনারদের ১৮ বছরের ওপরে যারা আছেন তারা পাবেন।
হাসপাতালে দেখা গেছে গ্রামের বয়স্ক লোকেরা আছেন প্রায় ৭০ শতাংশ। শহরের হাসপাতালে গ্রাম থেকে এসেছে। তাদের মৃত্যু সংখ্যাও সব থেকে বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ, যারা আমাদের এখানে বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে। কাজেই তাদেরকে ভ্যাকসিনেটেড করার জন্য আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। যেটার কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি।
কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছি, যেমন-মর্ডানার ভ্যাকসিন, ফাইজারের ভ্যাকসিন। সেখান (কোভ্যাক্স) থেকে আসবে ৬ কোটি ৮০ লাখ। সাত কোটিই ধরেন। আমরা জনসন অ্যান্ড জনসনের সঙ্গে চুক্তি করেছি সাত কোটি ভ্যাকসিনের জন্য। সেটা আগামী বছরের দ্বিতীয় কোয়াটারে হয়তোবা আমরা পাবো। সব মিলে এসব নিয়ে মোট ২১ কোটি ভ্যাকসিন। আমরা ১৪ কোটি লোককে ভ্যাকসিন দিতে পারবো। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ লোককে আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারবো।
অক্সিজেন প্রাপ্যতা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে ২শ টন চলে এসেছে। প্রতি সপ্তাহে ২শ টন করে আসবে। ৪৩টি অক্সিজেন জেনারেটর কিনছি, আদেশ দিয়ে দিয়েছি। একেকটার ক্যাপাসিটি ৫শ লিটার পার মিনিট, যেটার প্রতিটা দিয়ে পুরো একটা হাসপাতাল দিতে পারবে। সেটা আগষ্টে চলে আসবে। দেশে অক্সিজেনের সমস্যা হয়নি, আগামীতেও ইনশাল্লাহ হবে না।