নঈম নিজামের বক্তব্য সরাসরি শুনবে সম্পাদক পরিষদ: নঈম নিজামের ‘অভিযোগ’ নিয়ে মাহফুজ আনামের ‘বিস্ময়’

 প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৪:১২ অপরাহ্ন   |   মিডিয়া কর্নার


দেশের সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ থেকে সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজামের পদত্যাগের পর তা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এদিকে যে অভিযোগে নঈম নিজাম পদত্যাগ করেছেন, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সভাপতি মাহফুজ আনাম। এ ছাড়া সম্পাদক পরিষদ এক জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পদত্যাগের বিষয়ে নঈম নিজামের বক্তব্য তারা সরাসরি শুনবেন।

নঈম নিজামের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় ‘নঈম নিজামের পদত্যাগ বিষয়ে মাহফুজ আনামের বক্তব্য’ শিরোনামে সম্পাদক পরিষদের প্যাডে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে নঈম নিজামের পদত্যাগের সংবাদে আমি বিস্মিত ও মর্মাহত। সম্পাদক পরিষদের যে কোনো সিদ্ধান্ত সদস্যদের মধ্যে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। কখনই এর ব্যত্যয় ঘটেনি।

পরিষদের সিনিয়র সদস্য রিয়াজ উদ্দীন আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত নঈম নিজামকে ব্যক্তিগতভাবে জানাবেন এবং পরবর্তী সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করবেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে রিয়াজ উদ্দীন আহমেদকে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্বের অগ্রগতি পরিষদ সভাপতিকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।



বাংলাদেশের মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের একটি অংশের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের কমিটি পুনর্গঠনে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মাহফুজ আনাম সভাপতি ও নঈম নিজাম সাধারণ সম্পাদক হন। নঈম নিজাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের পাশাপাশি বসুন্ধর গ্রুপের টেলিভিশন স্টেশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের স্বামী।

আর মাহফুজ আনাম শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক। ডেইলি স্টার-এর মালিকানা ট্রান্সকম গ্রুপের।


গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন এর সম্পাদক নঈম নিজাম। এতে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পরস্পর ঐক্য ধরে রেখে একটি ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কঠিন বাস্তবতা হলো, সরকারের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে বিবৃতি প্রদান ছাড়া সম্পাদক পরিষদ আর কোনো কিছু নিয়ে কাজ করছে না। সম্পাদকদের একটি প্রতিষ্ঠান শুধু সরকারবিরোধী ভাব নিয়ে চলতে পারে না। পরিষদ পেশার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে না। শুধু সভাপতির ব্যক্তিগত ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠান চলছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের স্বার্থ রক্ষা সম্পাদক পর্ষদের কাজ হতে পারে না। এই সব তৎপরতা মিডিয়ার জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। কোনো অপরাধ প্রমাণের আগে কোনো মিডিয়া মালিকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’


বসুন্ধরা গ্রুপের অনলাইন সংবাদপত্র বাংলানিউজ নঈম নিজামের একটি বিবৃতিও প্রকাশ করে, তাতে বলা হয়, “আমরা পরস্পর ঐক্য ধরে রেখে একটি ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কঠিন বাস্তবতা হলো, সরকারের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে বিবৃতি প্রদান ছাড়া সম্পাদক পরিষদ আর কোনো কিছু নিয়ে কাজ করছে না। সম্পাদকদের একটি প্রতিষ্ঠান শুধু সরকারবিরোধী ভাব নিয়ে চলতে পারে না।

সেই সঙ্গে অনামা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “সভাপতি মাহফুজ আনাম সংগঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে সংবাদপত্র মালিকদের কারও কারও বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ এনে ব্যক্তিগত কুৎসাচারে লিপ্ত হন। এ বিষয়টি নিয়ে সভাপতি মাহফুজ আনামের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজামের তীব্র মতভেদ দেখা দেয়।”

বাংলাদেশে প্রতিদিনের মতো বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এই খবর আসে।

এ বিবৃতি প্রকাশের পর এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। তিনি এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে নঈম নিজামের পদত্যাগের সংবাদে আমি বিস্মিত ও মর্মাহত। কিন্তু, তার পদত্যাগপত্র আমি এখনও পাইনি। সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরিষদের অবস্থান জানানো হবে। সম্পাদক পরিষদের যে কোনো সিদ্ধান্ত সদস্যদের মধ্যে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। কখনই এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, তার সঙ্গে আমার কর্মক্ষেত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার এবং পরিষদ পরিচালনার বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কখনই কোনো মতানৈক্য হয়নি।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজামের আগামী ৩১ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে।