প্রভাস দত্ত এর কবিতা "ক্ষুধিত বাসনা"

ক্ষুধিত বাসনা
প্রভাস দত্ত
কি সৌভাগ্য তোমার!
ভাগ্যচক্রের অক্ষক্রীড়ায়
জিনিয়াছ শ্রেষ্ঠ পুরস্কার
দুর্লভ মানবজীবন।
মনোহর কান্তি শোভনে
সুদর্শন রূপে তুমি নয়ননন্দন;
বুদ্ধিবৃত্তির নিপুণ বরে
নিত্য নব আয়োজনে
সাজায়েছ ভোগের ভুবন
ঐশ্বর্যের বিলাসী সম্ভারে।
আদৃত হয়েছ ধরণীর পরে
কারুকর্ম দানে বিস্ময় অলংকারে।
অনুসৃষ্টিকুলে বশত্বের ইন্দ্রজালে
করিয়াছ আপনার অনুগত দাস;
রাজদন্ড হাতে হয়েছ আসীন
শাসকের আসনে রাজমহলে
প্রভূত্বের বিক্রমে সৃষ্টি করিয়াছ বশ।
কি দুর্ভাগ্য তোমার!
শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট শিরোরত্ন করে
মানব ধর্ম পালনের ব্রতে
মহাভূমে আহুত হয়েছ আড়ম্বরে;
ভুলিয়াছ সে ব্রতের আদ্য সংস্কার
ভুলিয়াছ দানের মহিমা
অকুন্ঠ প্রেমে মনুষ্য কর্মভার।
ক্ষুধার্তজনে দেখিয়া দরওয়াজে
বন্ধ করিয়া গৃহের কবাট
অন্তঃপুরে ডুবিয়াছ ভুরিভোজে।
শীর্ণজনের আকুল আকুতি
চেতনায় করে নি আঘাত
প্রমত্ত রয়েছ কুবেরের ধন অর্জনে;
ক্লেশিতজনের সজল মিনতি
অন্তরমর্মরে বিগলিত করুনায়
ঝরাতে পারে নি অশ্রুপাত
আকণ্ঠ ডুবিয়াছ বিত্তবাসনা মন্থনে।
মোহিত বিমূঢ় কাঙালিপনায়
মিটিল না ভোগ লালসার
আগ্রাসী পিপাসা।
ডুবিয়া দৌলত দরিয়ায়
ঘুচিল না তবু
ভিক্ষাবৃত্তির নির্লজ্জ নেশা।
চাই শুধু চাই অভিলাষে
নিশিদিন ছোটা রুদ্ধশ্বাসে।
করকোষ উপুড় করে
কণামাত্র করিতে দান
কাতর মনপ্রাণ
শতবার সঙ্কোচে মরে।
ধন-মান বিত্ত- বৈভবে
পরমার্থ লাভের নিরর্থ অনুভবে
পরাভূত হয়ে মানবতা
ক্ষমতার যুপকাষ্ঠে আত্মহননে
বরণ করে অক্ষম্য নীরবতা।
ধনরত্নের প্রাচুর্যে রচিতে প্রাসাদ
সত্যধর্মরে করিয়া বঞ্চনা
সদা মিথ্যাচারে সাজিয়ে ছলনা
অর্বাচীন দম্ভে করিছ প্রমাদ।
ভুলিয়াছ রংমহলের পুতুল খেলা
অকস্মাৎ সাঙ্গ হবে যবে;
যক্ষভান্ডারে জমা রত্নমেলা
তিলমাত্র সঙ্গী না হবে;
দিনশেষে অন্তিম যাত্রায়
রিক্তহাতে আশ্রয় পাবে
কাষ্ঠমঞ্চে অগ্নির কোলে
কিম্বা তিমিরঘন মৃত্তিকা শয্যায়।
তবুও নিরন্তর বিধাতার দ্বারে
আকুল প্রার্থনা সম্পদের তরে
মানত রচনা কর অনন্ত চাওয়ায়
অর্থ-বৈভবের বুবুক্ষু কামনায়।
দুরদৃষ্ট মানব কভু ভক্তিভরে
অশ্রু সাধনায় মাগিয়া করুনা
নিঃশর্তে চাও নি সৃষ্টিশ্বরে।
কবিঃ প্রভাস দত্ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম (অব)