ডেল্টা ধরনের প্রভাবের অন্তঃসত্ত্বা নারী-গর্ভের শিশুর ঝুঁকি কতটা?

কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের উল্লেখ করে গর্ভবতী নারীদের টিকা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আরও ৩৩টি দেশ। যেমন- মা হতে যাওয়া নারী যদি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন কিংবা তার স্বাস্থ্য যদি গুরুতর রোগের ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে টিকা নিতে বলা হয়েছে।
মহামারীর এই কঠিন সময়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ওপর ডেল্টা ধরনের প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। কোভিডে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠার ঝুঁকি একই বয়সী অন্য নারীদের তুলনায় বেশি। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেই ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অন্তঃসত্ত্বাসহ সবার ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাসের এই ধরনটি আরও বেশি গুরুতর শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গত মে মাস থেকে যুক্তরাজ্যে কোভিডে আক্রান্ত যে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের ৯৮ শতাংশেরই টিকা নেওয়া ছিল না।যুক্তরাজ্যের শীর্ষ কয়েকজন চিকিৎসা কর্মকর্তা এক যৌথ বিবৃতিতে গর্ভবতী নারীদের করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রসূতি নারীদের নিয়ে কাজ করা ‘ইউকে অবস্টেট্রিক সার্ভেইলেন্স সিস্টেম’ (ইউকেওএসএস) এর তথ্য অনুযায়ী ডেল্টা ধরনের কারণে কোভিড আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যের সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোভিডে আক্রান্ত প্রসূতিদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি এবং নিওমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ৫০ শতাংশ বেশি।
গত এপ্রিলে ‘দ্য জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (জেএএমএ) পেডিয়াট্রিকস’ এর এক সমীক্ষায় জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে অকালে শিশু জন্মদানসহ কম ওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। ‘ইউকেওএসএস’ এর সংগ্রহ করা নতুন তথ্য অনুযায়ী কোভিডের গুরুতর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে অন্তত একজন নির্ধারিত সময়ের আগে শিশু জন্ম দিয়েছেন। এছাড়া ‘সি-সেকশন’ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মের হারও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মায়েদের জন্ম দেওয়া পাঁচটি শিশুর মধ্যে একটি শিশুকে হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করতে হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ‘রয়্যাল কলেজ অব মিডওয়াইভস’ এর প্রধান নির্বাহী গিল ওয়াল্টন এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বজুড়ে লাখো অন্তঃসত্ত্বা নারীকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কার্যকরভাবে কোভিড থেকে নিরাপদ রাখছে। তাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি এবং শিশুদের ক্ষতির হারও অনেক কমিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন এবং অস্ট্রেলিয়ার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রপ অন ইমিউনাইজেশন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন যে সব নারী, তাদের অবশ্যই টিকা নেওয়া উচিত। টিকা নেওয়ার কারণে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। স্তন্যদাতা মা টিকা নিলে তার শিশুর ওপর এর কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।
আর যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ এর পরামর্শে বলা হচ্ছে, “টিকার কারণে আপনি কোভিডে সংক্রমিত হবেন না এবং বুকের দুধের মাধ্যমেও আপনর শিশুর দেহে তা যাবে না।”
গবেষণায় দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা যে নারীরা ফাইজার/বায়োএনটেক এবং মডার্নার কোভিড টিকা নিয়েছেন, তাদের শরীরে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি নবজাতকের শরীরেরও সঞ্চারিত হয়েছে।
অন্যদিকো , টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলে তাদের ক্ষেত্রেও উপসর্গের ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। টিকা দেওয়ার পরও যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে এমন কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, যা টিকা না দেওয়া ব্যক্তিদের উপসর্গের চেয়ে আলাদা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটে কোভিডের প্রধান যে উপসর্গগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে তার প্রথম তিনটি হল কফ, জ্বর এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি লোপ পাওয়া। তবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে উপসর্গ কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
টিকা নেওয়া কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে মূলত চারটি উপসর্গ দেখা যেতে পারে। যদি কেউ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে থাকেন এবং ঘন ঘন হাঁচির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে হতে পারে যে সেটা আসলে কোভিডের উপসর্গ। সুতরাং, এ ধরনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে জল গড়ানো এবং গলা ভেঙে যাওয়াও হতে পারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ।