ডেল্টার সংক্রমণে তছনছ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

 প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০২১, ০৬:০২ অপরাহ্ন   |   আন্তর্জাতিক


 করোনার ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। কভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হওয়ার পর এর যতগুলো ধরন শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সংক্রমণযোগ্য ও ভয়াবহ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে প্রথম এ ধরন শনাক্ত করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এর সংক্রমণ রীতিমতো ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছে। বিশজুড়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ধরন থেকে বাঁচতে আগের মতোই সামাজিক দূরত্ব, সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া, নাক ও মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখার প্রতি জোর দিয়েছে তারা।

নতুন পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আগের তুলনায় আরও বেশি টিকা গ্রহণকারী ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন।  টিকা নেওয়া থাকলে যে কোনও ভেরিয়েন্টের সংক্রমণেই গুরুতর উপসর্গ ও হাসপাতালে ভর্তির মতো বাড়াবাড়ি এড়ানো যাবে।  করোনা টিকা নেওয়া থাকলেও সংক্রমণ হতেই পারে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে তাহলে টিকা নিয়ে লাভ কী? কিন্তু প্রবল শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সমস্যা, অক্সিজেনের চাহিদা ইত্যাদি মারাত্মক প্রভাবগুলি রুখে দেওয়া যাবে।

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত চার সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের পরিমাণ ৮০ শতাংশ বেড়েছে। অনেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই কভিডের প্রভাবে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বৃদ্ধির কারণ এ অঞ্চলে টিকাদানের হার কম। সিঙ্গাপুর ও কম্বোডিয়ায় ছাড়া  অন্য দেশগুলো এখনো এ হার বাড়াতে পারেনি। 
ভিয়েতনাম সংক্রমণ এতটাই বেড়ে গেছে যে আগামীকাল থেকে দেশটির ১৯টি শহর ও প্রদেশে আরো দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ব্যাংককে মোট সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের এবং সারা দেশে এ সংখ্যা ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৯১২ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের মহাপরিচালক সুপাকিত সিরিলাক বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমণযোগ্য। তাই ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাও বেশি।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার  ২৭ কোটির বেশি মানুষ বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে এখন পর্যন্ত ৯৪ হাজারের বেশি মানুষের কভিড-১৯ রোগে মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ লাখ ৯ হাজার ৬৫৮ জন। গত দুই সপ্তাহে দেশটিতে যে পরিমাণ কভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়েছে তার ৯৪ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ দেশটিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।দেশটির মাত্র ৬ শতাংশ মানুষকে এখন পর্যন্ত টিকার আওতায় আনা হয়েছে।  

প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ মালয়েশিয়াকে এখন কভিড-১৯ রোগের হটস্পট বা সংক্রমণের কেন্দ্র বলা হচ্ছে।  মহামারী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পদত্যাগও দাবি করেন তারা। কুয়ালালামপুরে আয়োজিত এক বিক্ষোভে ‘ব্যর্থ সরকার’-সংবলিত কালো প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে বিক্ষোভকারীরা। 

ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তানের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক সময় পার করছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট, অক্সিজেন সংকট, প্রয়োজনের সময় অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়াসহ নানা সমস্যার কথা রোজই গণমাধ্যমে উঠে আসছে।



আন্তর্জাতিক এর আরও খবর: