অতিথির কলকাকলিতে মুখরিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন !

 প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা



মাহমুদুল হাসান (জাবি প্রতিনিধি) :

ঋতুর পালাবদলে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে পরীযায়ী পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি নৈস্বর্গমন্ডিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।প্রতিবছর শীতের মৌসুমে মোহনীয় প্রকৃতির এই ক্যাম্পাস অতিথি পাখির আগমনে তার অনন্য অনবদ্য সৌন্দর্য প্রকাশ করে যায় স্ব-গৌরভে।

ঢাকার অদূরে শহরের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা আর ধুলোবালি মুক্ত এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার ভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিদিন শত শত পাখিপ্রেমী-প্রকৃতিপ্রেমীরা অতিথি পাখি দেখতে ভিড় করেন। ক্যাম্পাসে ছোট-বড় আধভাঙ্গা উঁচু ঢিবি আর জলাশয়ের পাড়ে অনেক সরালি উড়ে বেড়ায় সাঁই সাঁই করে। আবার পরক্ষনেই ঝপাৎ করে বসে যায় লেকের স্বচ্চ পানিতে। আবার কোনো কোনোটি সাঁতার কাটে আপন ভঙ্গিমায়। তাছাড়া এখানে আসা দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন পখিদের খু্ঁনসুটির মতো দৃশ্য।

প্রচন্ড শীত আর খাদ্য সংকটে অস্তিত্ব রক্ষায় হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে ছুটে আসে বাংলাদেশের মতো অল্প শীত প্রধান দেশ গুলোতে। প্রতিবছর অক্টোবরের দিকে হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত শীত প্রধান দেশ গুলো যেমন সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, হিমালয় অঞ্চলের প্রচন্ড শীত ও ভারি তুষারপাতে পরিযায়ী পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ প্রধান অঞ্চল গুলোতে চলে আসে।


নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। দেশের যে সকল স্থান গুলোতে অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে তার মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। উল্লেখ্য ১৯৮৬ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির আগমন শুরু হয় এবং ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার ।

ক্যাম্পাসে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ টি লেক রয়েছে যার চারটিতে অতিথি পাখি আসে নিয়মিত। এরমধ্যে জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক , রেজিস্ট্রার ভবন সংলগ্ন লেক, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার ও সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকে পাখি আসে সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে আসা মোট অতিথি পাখির শতকরা ১২ শতাংশই জাহাঙ্গীরনগরের জলাশয়গুলোতে আশ্রয় নেয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়।

প্রতিবছর শীতকালে জাবি ক্যাম্পাসে বালিহাঁস,লেঞ্জা,জলপিপি,সরালি,বড় সরালি, ছোট সরালি,পাতারি,চখাচখি,খঞ্জনা,চীনা,পান্তামুখী,পাতি হাঁস,পানিমুরগি,নর্থগিরিয়া,কমনচিল,কটনচিল,পাতিবাটান,পান্তামুখী,বুটি হাঁস বৈকাল,নীলশীর ও আরো নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। যাদের মধ্যে আছে দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু প্রজাতির পাখি।

এসব পরিযায়ী পাখিরা পানিতে ভেসে থাকে এবং পানির মধ্যে থেকে বিভিন্ন পোকামাকড়,গুল্ম উদ্ভিদ খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার ও সুইমিংপুল সংলগ্ন লেক নিরিবিলি ও কোলাহল মুক্ত হওয়ায় এই সরালি প্রজাতির পাখির সংখ্যা বেশী রয়েছে। শীতের রেষ কেটে গেলেই বসন্তের সময়টাতে এসব পরিযায়ী পাখি আবারও তাদের চিরচেনা ভূমিতে ফিরে যায়।

অতিথি পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লেকের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। এছাড়া মানুষের জ্ঞাতার্থে 'এখানে ঢিল ছুঁড়বেন না' , 'দূরত্ব বজায় রাখুন', 'পাখিদের বিরক্ত করবেন না' , 'হর্ন বাজাবেন নাহ' ইত্যাদি সচতনতা মূলক নির্দেশনাবার্তা রাস্তার পাশে লেকের ধারে পোস্টার,বিলবোর্ড আকারে টাঙ্গানো হয়েছে ।

পাখি গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাস লেকে যে পাখি গুলো দেখা যাচ্ছে তা ছোট সরালি প্রজাতির এবং মাঝে-মাঝে বড় সরালির-ও দেখা মিলে । শীতের আবহ বাড়ার সাথে সাথে অতিথি পাখির সংখ্যাও বাড়বে। আশাকরছি গতবারের মতো এবারও ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে অন্যান্য সকল প্রজাতির পাখিরাও চলে আসবে।

তিনি আরো জানান যে অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় এইবছরেও জাবিতে পাখি মেলা হবে যার সম্ভাব্য তারিখ জানুয়ারীর ৮,২০২২ ।

অতিথি পাখির নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, " অতিথি পাখি আগমনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আমরা লেকের পাশে সতর্কতামূলক ব্যানার স্থাপন করেছি। এছাড়া পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে লেক সংস্কার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন লেকের পানিতে জন্ম নেয়া অতিরিক্ত কচুরীপানা পরিস্কার, কাটাতারের বেড়া মেরামত করা হয়েছে।"

আপনি যদি একজন পাখিপ্রেমী-প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ হয়ে থাকেন আপনিও আসতে পারেন আর হারিয়ে যেতে পারেন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর এই চির সবুজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
উপভোগ করতে পারেন রক্তকমল শাপলা শোভিত লেকে অতিথি পাখির জলকেলি,বাহারী রূপের খেলা আর পাখির মিস্টি মধুর কলকাকলি।আরো উপভোগ করতে পারেন এদের দুস্ট-মিষ্টি খুনসুটি ।