নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন : জামালপুরে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে

 প্রকাশ: ১০ অগাস্ট ২০২১, ০১:১০ অপরাহ্ন   |   অর্থ ও বাণিজ্য





টানা তিন মেয়াদে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে সরকার । ২০১৭ সাল থেকে দেশে এখন পর্যন্ত সাতটি সোলার পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ১৩০ মেগাওয়াট। এরই মধ্যে সোলার পার্কগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।  স্থাপিত সোলার পার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। 
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২৩ সালের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শেখ হাসিনা সোলার পার্কটি নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)।  
পুরো প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৫১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। জামালপুরের মাদারগঞ্জে প্রায় এক দশক আগে জেগে ওঠা চরে ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে । জেগে ওঠা চরটি সরকার অধিগ্রহণ করার পর আরপিসিএলকে জমি বরাদ্দ দেয় ভূমি মন্ত্রণালয় ও জামালপুর জেলা প্রশাসন। দুই বছর আগে স্থানটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিকল্পনা নেয় আরপিসিএল।  
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ পেতে সরকার জামালপুরে যে কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ধরনের একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমরা দেশের সৌরশক্তির বড় অবদানটা বুঝতে পারব। বিদ্যুতের ট্যারিফ বেশি হলেও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে অন্তত এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি।

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সাড়ে ৩ শতাংশের বেশি নয়। বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৭৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে উৎপাদন হচ্ছে ৫৩২ মেগাওয়াট।  জমির স্বল্পতার জন্য সৌরবিদ্যুৎ ব্যাপকহারে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সেইসঙ্গে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সময়োপযোগী বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনাও দরকার।এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা প্রয়োজন যাতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বল্প জমি লাগে।   বেসরকারি খাতের বেশিরভাগ উদ্যোক্তারা বৃহৎ সৌর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য খাস জমির ব্যবস্থা করতে পারেননি, যা গ্রিন এনার্জি থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হচ্ছে। গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্যানেল স্থাপনের জন্য অনেক জমির এবং অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য বিশাল মূলধন প্রয়োজন। 

দেশে এখন প্রচলিত উৎস থেকে ২০ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ৭০০.৬১ মেগাওয়াট। যা মোট উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র তিন শতাংশ। সৌর শক্তি সর্বাধিক কাজে লাগানোকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি) নবায়নযোগ্য শক্তির আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১০ শতাংশে (২৪৭০ মেগাওয়াট) পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। 

বিভিন্ন নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসগুলোর মধ্যে এই খাতের সর্বোচ্চ ৪৬৬.৬৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে শীর্ষে আছে পিভি সোলার, এর পরে ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন জলবিদ্যুৎ, বায়ু থেকে ২.৯ মেগাওয়াট, জৈব-গ্যাস থেকে ০.৬৩ মেগাওয়াট এবং বায়োগ্যাস থেকে ০.৪ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তিন শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যেখানে ভারতে তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ২৪.১৬ শতাংশ। যা প্রায় ৯০ হাজার ৩৯৯ মেগাওয়াট। 

 বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্যের রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে। যেখানে কোনো গ্রিড আওতার বাহিরে থাকা পরিবারগুলোর জন্য ৫৮ লাখ এসএইচএস স্থাপন করে বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। প্রয়োজনীয় জমি পেতে সমস্যা থাকায় রুফটপ সোলার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-ভবনগুলোর ছাদে এগুলো স্থাপন করা গেলে শুধু এ খাত থেকেই বিপুল পরিমাণে সৌর শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ছাদ সরবরাহে সরকারি ভবনগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক বিধান না করায় বাংলাদেশ এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি মিশ্রণে আরও ভিন্নতা আনা প্রয়োজন। জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন নিয়ে উন্নত বিশ্ব কাজ করছে। বায়ু থেকে বিদ্যুৎ, সোলার রুপ টপ, ওশান এনার্জি নিয়েও নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এসব কাজে গবেষণার জন্য প্রয়োজনে অর্থায়নও করা যাবে।