প্রতিদিন প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে

 প্রকাশ: ১০ অগাস্ট ২০২১, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন   |   অর্থ ও বাণিজ্য






বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র  আবিষ্কৃত হয়েছে । প্রতিদিন প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন করতে পারব । যেখান থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করতে পারব।  ‘এনার্জি সিকিউরিটি: মডার্ন কনটেক্সট, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে আজ সোমবার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।

 নতুন করে গ্যাস এক্সপ্লরেশনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি বিশেষভাবে জানাতে চাই- জকিগঞ্জে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ৬৮ পিসিএফ (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) গ্যাসের সন্ধ্যান আমরা পেয়েছি।  যার মূল্য প্রায় এক হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। বাপেক্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, তারা দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পেরেছে।  সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে জ্বালানি বিভাগের যে টিম এই কাজ করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট এক পরিপত্রে ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।২০১১ সাল থেকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালিত হয়ে আসছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসটি উপলক্ষে ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এবছরের প্রতিপাদ্য,   ‘মুজিববর্ষে জ্বালানি খাত সমৃদ্ধিতেে এগিয়ে যাক’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস।  দিবসটি উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর অবদান: বর্তমান প্রেক্ষিত এবং ভবিষৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে  পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । 
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জ্বালানি খাতে এই সিদ্ধান্তকে দূরদর্শী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ৪৫ লাখ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে (তখনকার ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) দিয়ে  ডাচ-রয়্যাল বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি শেল অয়েল-এর কাছ থেকে তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, হবিগঞ্জ ও কৈলাসটিলা-এই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র  কিনে নেন। এরপর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীকালে এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বড় নির্ভরস্থল হয়ে ওঠে। প্রতিবছরের মতো এবারও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ দেশবাসীকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

 বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) গত জুনে  ডিএসটি (ড্রিল স্টিম টেস্ট) সৌভাগ্য শিখা জ্বালাতে সক্ষম হয়। কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি), আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের অধিক।  কূপটিতে মোট ৪টি স্তুরে গ্যাস প্রাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বাপেক্স। নতুন এই ফিল্ডটি থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিয়ানীবাজার ও ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোলাপগঞ্জ। 

সম্প্রতি একটি সেমিনারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান ওই ফিল্ডটি সম্পর্কে বলেছিলেন,  কুপের প্রেসার ৬০ হাজারের অধিক রয়েছে। পরীক্ষা চলছে, এটি আমাদের জন্য দারুণ সুখবর হতে পারে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে।  দৈনিক কমবেশি ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে।  সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফ’র মতো।


১১৩টি কূপ দিয়ে প্রতি বছরে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় এক টিসিএফ’র মতো। এরমধ্যে দেশীয় কোম্পানির ৭০টি কূপের (দৈনিক) ১ হাজার ১৪৫ এমএমসিএফডি, আইওসির ৪৫টি কূপের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৬১৫ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)।