আন্তর্জাতিক বৈষম্য দূর করে জলবায়ু সুবিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে : কাজী খলীকুজ্জামান

 প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ


কার্বন নি:সরন হ্রাস ও আন্তর্জাতিক বৈষম্য দূর করে জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করতে গোটা বিশ্বের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক অবদান রাখছেন ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। কিন্তু তিনি চেষ্টা করলেও মাঠে ময়দানে যারা তার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার কথা তারা তা করছেনা। যার ফলে কাজেন যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশকর্মী কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় যুব জলবায়ু সম্মেলন ২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।  একশনএইডের গ্লোবাল ইয়ুথ-লিড ক্লাইমেট ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রতীকি যুব সংসদ এই সম্মেলনের আয়োজন করে।  উদ্বোধনী সভায় ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী সোহানুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন একশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার- ইয়াং পিপল নাজমুল আহসান। এতে দেশের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল থেকে প্রায় একশত জলবায়ু যোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। ৮টি বিভাগের তরুণ প্রতিনিধিরা এসময় তাদের এলকার সমস্যা, সমাধান ও দাবিমালাসহ জলবায়ু সুবিচার রুপকল্প তুলে ধরেন।
 
সম্মেলনে কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, তরুণদের সম্পৃক্ততা ছাড়া টেকসইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানব জাতি আজ বিপদাপন্ন। এ সঙ্কট মোকাবিলায় তরুণদের ভূমিকা আরও জোরালো করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণ থেকে শুররু করে তা বাস্তবায়ন, সব কিছুতেই তরুণদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান খলীকুজ্জামান আহমদ। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে  দেশের জনসংখ্যার সর্বাপেক্ষা সৃজনশীল ও উদ্যোমী অংশ-যুবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুবদের সম্পৃক্ত করা।

তরুণদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সুন্দর গ্রামীণ জীবন গড়ে তোলা। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে উন্নত বিশ্বের দিকে আওয়াজ তোলা। যাতে তারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে। অভিযোজন নিয়ে যুবকদের কাজ করতে হবে৷ সরকারের কাছে দাবী পেশ করতে হবে। মানবীয় মূল্যবোধ ও করণীয় সম্পর্কে জেনে কাজ করতে হবে।
কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ০.৪ শতাংশ গ্রীণ হাউস গ্যাস নিঃসরণ করা হয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু অনুযায়ী ৭ ভাগের ১ ভাগ, সারা বিশ্বে যে নিসঃরন হয় তার ২০ ভাগের ১ ভাগ। যোগাযোগ, শিল্প, ও জ্বালানীতে নিসঃরন কমাবে এটা এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের বাংলাদেশের অঙ্গীকার।
 
তিনি  আরো বলেন, বর্তমানে যে শিল্প বিপ্লব হচ্ছে তাতে অনেক দেশ উচ্চ আয়ের দেশ হবে, কিছু দেশের মানুষ ধনী হবে কিন্তু অন্যরা পিছিয়ে থাকবে। এর কারন হচ্ছে আন্তর্জাতিক বৈষম্য। এক দেশ এগিয়ে গেলে অন্যদেশের তা সহ্য করেনা৷ কেউ এগিয়ে গেলে অন্যরাও এগিয়ে যেতে চায় যার কারনে সবাই সমান হারে উন্নত হওয়ার দৌড়ে পৃথিবীর অস্তিস্ত সংকটে পরছে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্মেলনে সব দেশ একমতে পৌঁছাতে পারেনা। কপের জায়গায় নিজেদের দেশের জন্য বিশেষ কিছু অর্জন হয়না। এটা বিশ্বের সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তহবিল দেয়৷  তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
 
তিনি বলেন, জলবায়ু নিয়ে কিছুটা উন্নত হয়েছে। গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরন কমানো, অভিযোজন,  প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের দেশ গুলো গ্রীণ হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমালেও বিশ্ব আগামী শতাব্দীতে উন্নত হতে পাওে ৷ বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের পৃথিবীর অবস্থা কঠিন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু সংকটের কারনে আমাদের অবস্থা খুবই কঠিন হয়ে পরছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয়। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয় তখন হচ্ছে, যখন দরকার তখন হচ্ছেনা। জলবায়ু নিয়ে আমরা অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করি কিন্তু যারা বাস্তবায়ন করার কথা তারা দায়িত্ব নিয়ে করছেনা।  

জাতীয় যুব জলবায়ু সম্মেলনে দক্ষতা উন্নয়ন অধিবেশনে সহায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশন আব্দুল কাইয়ুম। যুব প্যানেল এবং মিডিয়া প্যানেলে তরুণ জলবায়ু যোদ্ধারা গণমাধ্যমেকে জলবায়ু নিয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে আহবান করেন। । জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ প্রকৌশল) মো: নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং মুক্ত সাংবাদিক মুনওয়ার আলম নির্ঝরের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক ছিলেন একাত্তর টিভির স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান, মোহনা টিভির পরিবেশ বিষয়ক সংবাদদাতা ফেরদৌস উষা এবং স্পাইস মিডিয়া লিমিটেডের বার্তাকক্ষ সম্পাদক সাজিদ আরাফাত প্রমুখ। সমাপনী অধিবেশনে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য রুবিনা আক্তার মিরা এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জলবায়ু সুশাসন বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ রয়েছে। কিন্তু তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।  তরুণদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, জলবায়ু নিয়ে শুধু শুনলেই হবেনা। জলবায়ু সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে। শুধুমাত্র আন্দোলন করলে হবেনা, আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হবে।  আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলতে হবে৷ কাউকে বাদ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্ভব নয়। সবাই মিলে আগামীর পৃথিবী সুন্দর করতে কাজ করাতে তিনি আহবান জানান।

রবিবার (১২ ডিসেম্বর) তরুণ জলবায়ু যোদ্ধাদের নেটওর্য়াক ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের বার্ষিক সাধারণ সভা ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে দুই দিন ব্যাপি আয়োজন সমাপ্ত হয়।