সন্তানের ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা পায়নি রাসেল,আটক ২

এনামুল হাসান নাইম:- কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মোটরসাইকেল চালক রাসেল হোসেনকে হত্যার ২ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় হত্যার সঙ্গে জড়িত ২ যুবককে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই তারা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা থেকেই রাসেলকে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে রাসেল মেয়ের ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা চাইলেও ঘাতকেরা তাকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এমনটিই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া গ্রামের ডেপার মাঠের ধান খেত থেকে পৌরসভার সাবদিয়া গ্রামের মাজিদ মোড়লের ছেলে রাসেল হোসেনের (২৬) লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন ও কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন। রাসেল বিবাহিত ও এক মেয়ের জনক।
রাসেল হোসেন গত ১৬ আগস্ট বিকালে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তার মোবাইলে পরিবারের লোকজন কল দিলে বন্ধ পায়। বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার গোপসেনা থেকে মোটরসাইকেলটি পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সকালে লোকজনের মাধ্যমে রাসেলের পরিবার জানতে পারেন চিংড়া ডেপার মাঠে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে রাসেলের মরাদেহ শনাক্ত করে তার পরিবার। এ বিষয়ে নিহত রাসেলের বাবা মাজিদ মোড়ল কেশবপুর থানায় মামলা করেন।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় যশোর জেলার পুলিশ সুপার মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় তদন্ত করতে দেন। গত শনিবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের সদস্যরা উপজেলার হাসানপুর, বিষ্ণুপুর ও সাগরদাঁড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২ যুবককে গ্রেফতার করেন। তারা হলেন উপজেলার হাসানপুর গ্রামের আব্দুর রহমান সরদারের ছেলে মাসুদ হোসেন (১৯) ও বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুর রউফ মোড়লের ছেলে অহিদ হোসেন (১৯)। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক রাসেলের ব্যবহৃত মোবাইল ও হত্যাকাজে ব্যবহৃত ১টি চাকু জব্দ করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মাসুদ ও অহিদ ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। তারা ১৬ আগস্ট ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ছুরি নিয়ে কেশবপুর থেকে খুলনায় যায়। সেখানে ছিনতাই করতে না পারায় রাত আনুমানিক ১১টার সময় খুলনা থেকে ট্রাকে করে চুকনগর আসে। ওই স্থানে রাসেলকে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ৩শ’ টাকা ভাড়ার চুক্তিতে সাগরদাঁড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে চিংড়ার ডেপার মাঠের মধ্যে নিয়ে ছুরির ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে চাইলে রাসেল বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে তারা রাসেলের পেটে আঘাত করে। রাসেল মোবাইল ফোনে শিশু মেয়ের ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা চাইলেও ঘাতক মাসুদ ও অহিদ তাকে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে গলার শ্বাসনালী কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা হত্যার কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে গোপসানা এলাকায় ফেলে দেয়। এছাড়া ১০ থেকে ১৫ দিন পর রাসেলের মোবাইল ফোনটি হাসানপুর বাজারের এক মুদি দোকানদারের কাছে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপন কুমার সরকার বলেন, মাসুদ ও অহিদকে গ্রেফতারের পর হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। আসামিদেরকে রোববার যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।