ফরিদপুরে নৌকা প্রার্থীর হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আহত ২৫

নাজিম বকাউল (ফরিদপুর) :
ফরিদপুরের নগরকান্দায় পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার কর্মীসভায় অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে উপজেলার রসুলপুর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় তিনজন পুলিশসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। তবে আহতদের তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ৬নং তালমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রঞ্জিত কুমার মন্ডল ও স্থানীয় সাংসদের এপিএস সফিউদ্দিনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নৌকা সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ইউনিয়নের সাধারন ভোটারদের মাঝেও চরম ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। হামলায় তিন পুলিশসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার ১৭ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়া নিয়মিত কর্মীসভার অংশ হিসাবে শনিবার (৩০ অক্টেবর) বিকালে ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভা চলাকালিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রঞ্জিত কুমার মন্ডলের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল এসে রসুলপুর বাজারে অবস্থান নেয়। এসময় কামাল হোসেন মিয়ার কর্মীসভা দেখে মিছিলটি স্লোগান দিতে দিতে ওই সভাস্থলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরে ‘জামাল-কামালের চামড়া তুলে নিবো আমরা’ স্লোগান দিয়ে কামাল হোসেন মিয়ার কর্মীসভায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলতে থাকে। খবর পেয়ে নগরকান্দা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলে ইটের আঘাতে পুলিশের তিন সদস্য গুরুতর আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ কর্মী জাকির হোসেন জানান, মোটর সাইকেল প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার রসুলপুর বাজারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলেন। এক পর্যায়ে বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে নৌকার একটি বিশাল মিছিল এসে বাজারের ভেতরে অবস্থান নেয়। এর কিছুক্ষন পরে মিছিলটি স্লোগান দিতে দিতে কামাল হোসেন মিয়ার সমাবেশে ঢুকে পড়ে এবং তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। পরে দুই পক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতিই পরে সংঘর্ষে রুপ নেয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ২৫ জন মানুষ আহত হয়। তবে কামাল হোসেন মিয়ার লোকবল কম থাকায় তাদের অন্তত ১৭ জন মানুষ গুরুতর আহত হোন। হামলার সময় আ.লীগের রঞ্জিত কুমার মন্ডল ও স্থানীয় সাংসদের এপিএস সফিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছোটভাই অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়া বলেন, এভাবে আধিপত্য চালালে আমরা নির্বাচন করবো কিভাবে? তারা (নৌকা মার্কার সমর্থক) চাচ্ছে আমরা তাদের হামলার ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াই। কিন্তু ওদের আশা পূরণ হবে না। আমাকে ও আমার সমর্থকদের উপর যতই হামলা,মারধর করা হোক আমি জীবিত থাকতে নির্বাচন থেকে সরবো না। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা দীর্ঘদিন এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার মা বর্তমান চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন। আমার পরিবার আওয়ামী পরিবার। আমি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। তারা আমার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও একাধিকবার হামলা করতেছে। আমার লোকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করবো।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রনজিত কুমার মন্ডল মুঠোফোনে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার সাথে আমি জড়িত না, এবং ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হয়েছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি থামেনি। তবে স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। ওই ঘটনায় রইস শেখ ও আক্কাস নামের দুই যুবক আহত ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে।