কোন মতন জীবনটা ধরি এই বাঁধের রাস্তায় উঠি জীবন টা বাঁচাইছি

মোস্তাফিজুর রহমান (লালমনিরহাট):
তিস্তা হামার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। একদিনের বানোত(বন্যায়) বাড়িঘর সব ভাসি নিয়া গেইছে। কোন মতন জীবনটা ধরি এই বাঁধের রাস্তায় উঠি জীবন টা বাঁচাইছি। রাইতে চোখত ঘুম নাই আমাগো । প্লাস্টিক দিয়া কোন মতন একটা থাকার জায়গা করছি। সে খানোত রাইতে মশার কামড় খেয়ে রাইত কাটাইতেছি।
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অলিয়ার রহমান (৭৫)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছ, পরিবারগুলো বাঁধের রাস্তায় প্লাস্টিক ছাউনি দিয়ে কোন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রান্না করতে না পারায় কেউ শুকনো খাবার কেউ বা পান্তা ভাত খেতে দেখা গেছে।
জানা গেছ, হঠাৎ ভারতের গজলডোবার সব কয়টি গেট খুলে দিলে গত বুধবার সকাল ১১ টায় তিস্তার প্রবল স্রোতে ব্যরাজ রক্ষার ফ্লাট বাইপাস ভেঙ্গে যায়। এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। গৃহহীন হয়ে পড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার। নদীর প্রবল স্রোতে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো স্থানীয় বাধের রাস্তায় এবং উঁচু স্থানে প্লাস্টিক পেতে ঘর করে মানবেতর জীবনযাপন করছে।এখন তিস্তার পানি কমে গেলেও সে পরিবারগুলো নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেনি। পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি ভেসে গেছে বাড়ির আঙ্গিনায় পাশে গর্ত হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
তিস্তা পাড়ের দোয়ানি গ্রামের কুসুম আলী জানান,নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে এই প্লাস্টিক মুড়িয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। এখন কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
সাজেদা খাতুন বলেন,প্রবল স্রোতে ঘরবাড়ি থেকে কিছুই আনতে পারেনি হাঁস-মুরগি সব ভেসে গেছে শুধু সন্তান দুইটাকে বুকে নিয়ে এই রাস্তার উপরে এসেছি। এখন অনেক কষ্টে করছি। গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, আমি এবং সাংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন এমপি এ সকল অসহায় মানুষের পাশে থাকার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি কমতে শুরু করে ৪০ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান,জেলার জন্য পাঁচ লক্ষটাকা ও ৫০ মেট্রিকটন খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ হয়েছে। বন্যাত এবং ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলছে।