খুলনার ভূতিয়ার বিলে নয়নজুড়ানো পদ্মফুল এবার আর ফোটেনি: নেই দর্শনার্থীদের আগমন

 প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০১ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ




এম এ আজিম (খুলনা):
খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিল এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অধিক পরিচিতি পেয়েছে নয়নজুড়ানো পদ্মফুলের কারণে। প্রতি বছরই পদ্মফুলের সৌন্দ্যর্য উপভোগ করতে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এ বিলে।  গত কয়েক বছর ধরেই এ বিল কাছে টেনেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। একই সঙ্গে বিলে ঘুরতে নৌকা মাঝি ও রকমারি জিনিসের বিকিকিনিও হয়ে থাকে। পদ্মবিল সুনাম বাড়িয়েছে তেরখাদারও। 
কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। ফোটেনি পদ্মফুল। এ কারণে পর্যটকও আসেনি এ বিলে। কারণ: বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিলে নোনা পানি প্রবেশ করায় দৃশ্যপট বদলে গেছে।
ভূতিয়ার বিলের হৃদয় বিমোহিত করা পদ্মফুল কাছে টানতো দুর-দুরন্তের পর্যটকদের। করোনা পরিস্থিতিতে সব বিনোদন স্পট যখন বন্ধ ছিল, তখনও মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে তেরখাদার পদ্মবিলে যাওয়ার জন্য উন্মুখ ছিল সকলেই। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নোনা পানি প্রবেশ করায় এবার ফোটেনি পদ্মফুল। ফলে এবার আসেনি মাঝিদের স্বচ্ছলতা আর জমেনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পসরাও। 
খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভুতিয়ার বিলে মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে প্রতিবছর গণমাধ্যম কর্মীরাও ছুটে আসতেন স্বচিত্র প্রতিবেদন করতে। এবার আসেননি তারাও। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ভ্রমণপ্রেমী এখানে বেড়াতে আসতেন। পদ্মফুলের সৌন্দর্য তাদের স্বাগত জানাতো। ভূতিয়ার বিলে প্রতিবছরের বর্ষার ন্যায় এবার পদ্মফুল ফোটেনি। এর মাধ্যমে মৌসুমি কর্মসংস্থান চাঙ্গা হয়ে উঠেনি।
এদিকে, ভ্রমণ পিপাসুদের অনুপস্থিতিতে নৌকার কদর ভুলতে বসেছে সবাই। বিলে পদ্মফুলের পুরো অংশ নৌকায় ঘুরিয়ে দেখতে ২০০-৫০০ টাকা গুণতে হতো, পর্যটকদের। আর এ অর্থে স্বচ্ছল হয়ে উঠতো প্রায় শ’ খানেক নৌকা মাঝি পরিবারের।
নৌকার মাঝি শিপলু চৌধুরী, আবুল কালাম শেখ, মনু শেখ ও তাজমুল চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন মাঝি বলেন, গেল বছরগুলো এসময়ে নৌকা নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতাম। যা আয়-ইনকাম হতো তা বেশ ভালোই চলতো। এবার এখন পর্যন্ত ফুল ফোটেনি, তাই  পর্যটকরাও আসেনি। আমাদেরও আয়-ইনকাম নেই।
এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ভূতিয়ার বিলের আয়তন প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর। এর মধ্যে মাত্র ৪০-৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মফুল ফুটতো। বাকিটুকু শ্যাওলা ও আগাছায় ভরা।
তিনি আরও বলেন, গত ২৭ মে চিত্রা নদীর মসুন্দিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভূতিয়ার বিলসহ কয়েকটি বিল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। লবনাক্ত পানিতে প্রায় ২৭শ’ হেক্টর জমির বোনা আউশ-আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। লবণ পানির কারণে এবার পদ্মফুল আর ফোটেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভূতিয়ার বিলে পদ্ম ফুলের নতুন কুঁড়ি দেখা দিয়েছে, ফুল হয়তো ফুটবে। তবে তখন আর ভ্রমণ পিপাসুরা আসবে কি না, সে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে মাঝিদের মনে।