কক্সবাজারের বনাঞ্চলে হাতির বিচরণ

 প্রকাশ: ১৮ অগাস্ট ২০২১, ১১:৪৪ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ



এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন (কক্সবাজার) : 


কক্সবাজারের টেকনাফের  বনাঞ্চলে হাতি দলের বিচরণ দেখা গেছে। গত তিন বছরের ভেতরে এ ধরনের হাতির পাল দেখেনি বন্যপ্রাণীসহ ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের টেকনাফ সদরে রেঞ্জের আওতাধীন মাঠ পাড়াস্থল বনাঞ্চলে এই হাতি দলের বিচরণের দেখা মেলে। গত দেড় বছরে অনন্ত ১২টি হাতির বাচ্চা প্রসব হয়েছে বলে ধারণা বন বিভাগের।


এর আগে গত জুন মাসে টেকনাফ সীমান্তের নদী ও সাগরে অবস্থানরত দুটি হাতিকে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম এবং বন বিভাগসহ উপজেলা প্রশাসনের যৌথ টিম চার দিনে প্রচেষ্টায় বনে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

জানা যায়, গত তিন বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আটটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় ৬০টিরও অধিক হাতির চলাচল রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ১০ হাজার একর গভীর বনাঞ্চল গত চার বছর আগে ১১ লাখ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অধীনে চলে যাওয়ায় হাতিগুলো আটকা পড়েছিল। পুরো এলাকায় রোহিঙ্গাদের বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি বান্দরবানের হাতির ২৩টি নিরাপদ চলাচলের করিডোর রুদ্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে হাতি চলে আসায় হাতির আক্রমণের শিকার হচ্ছে গ্রামের লোকজন। উখিয়া কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া এবং মধুরছড়া ছিল হাতির নিরাপদ আবাসস্থল সেটিও নাই হয়ে গেছিল। গত তিন বছরে হাতির আক্রমণে ১৩ জন রোহিঙ্গাসহ ২২ জনেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

বনাঞ্চলে হাতির বিচরণ আমাদের জন্য খুব একটা ভাল দিক উল্লেখ করে কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের বাসস্থলের কারণে ক্ষতির দিকটা পুষিয়ে নিতে বন্যপ্রাণী রক্ষায় গত দুই বছরে হাতির পাশপাশি বন্যপ্রাণীর উন্নয়ন ও খাদ্য উপযোগী দেশিয় প্রজাতির চারা-ঢালার ৭৮০ একর বনায়ন করা হয়েছে। ফলে বিশেষ করে হাতিসহ অন্যন্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও খাদ্য উপযোগীর উন্নয়ন হয়েছে। এতে প্রত্যেক রেঞ্জের বনাঞ্চলে নতুন নতুন বাচ্চাসহ হাতি দেখা যাচ্ছে।’

তিনি জানান, অনুমান করা যায় গত দেড় বছরে অন্তত ১২টি হাতি জন্মছে। আমাদের অপ্রতুল জনবল দিয়ে আরও আড়াই’শ একর বনায়নের প্রস্তুতি চলছে। সেটি সম্পন্ন হলে দিন দিন বৃদ্ধি পাবে হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সংখ্যা।  

দক্ষিণ বন বিভাগ টেকনাফের সহকারি রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমেদ জানান, রোহিঙ্গা আসার পর বনাঞ্চলে এ ধরনের হাতির বিচরণ খুব একটা দেখা যায়নি। কিন্তু মঙ্গলবার এই রেঞ্জে একটি হাতির দলের বিচরণ দেখা যায়। সেখানে দুই বছর বয়সের ২টি বাচ্চা হাতিসহ ৪টি হাতির পাল দেখা গেছে। সম্প্রতি হিমছড়ি, ধোয়াপালং, পানেরছড়া, ইনানী, হোয়াইক্যং, মনখালী, শীলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চলেও বাচ্চাসহ হাতির বিচরণ দেখা যাচ্ছে।’

তিনি জানান, মূলত বন সুরক্ষা হওয়াতে বনাঞ্চলে হাতির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য খুবিই ভাল দিক। তবে কাউকে যাতে বনাঞ্চলে বিদুৎতের লাইন সংযোগ না দেয় বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সবাইকে।