মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন প্রয়োজন

 প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন   |   মিডিয়া কর্নার



২০১৮-১৯ সালের জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক ও ১৩.৬ শতাংশ শিশু নানাবিধ মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিড পরিস্থিতির কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আরো বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য শুধু কোভিডকালীন নয়, বরং সবসময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন  ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। এলক্ষ্যে সক্রিয় জীবন যাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, সামাজিক সম্প্রীতি, গণপরিসরগুলোর সৌন্দর্য্য বর্ধনে সীমাবদ্ধ না থেকে সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণ, আবাসনগুলো এমনভাবে তৈরি করা যেন খেলাধূলার জন্য যথেষ্ট পরিসর পাওয়া যায়, সড়কগুলোতে খেলাধূলার সুযোগ তৈরি ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। এক্ষেত্রে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ অনুসরণে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা যেতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসার পরিবর্তে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কর্মসূচি, গবেষণা, এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আজ ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার, ২০২১ সকাল ১১.০০টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “মানসিক স্বাস্থ্যঃ আমাদের করণীয়” শীর্ষক ভার্চুয়াল টক শো-তে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার এর সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এর ল্যাবরেটরী সার্ভিস এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদ খন্দকার এম আনসার হোসেন, হেল্থ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা- এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী।
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এর ল্যাবরেটরী সার্ভিস বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, কোভিড সংক্রমণের পরেই মানসিক স্বাস্থ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে হলে একদিকে যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি আচরণগত পরিবর্তনও প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা ইতোমধ্যে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তারা যেন যথাযথ সেবা পান তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদ খন্দকার এম আনসার হোসেন বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে মন খুলে কথা জরুরি এবং এজন্য প্রয়োজন বন্ধু। বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রে খেলাধূলার জায়গা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। মুনাফাভিত্তিক চিন্তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আবাসন প্রকল্পগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে খোলা জায়গাকে প্রাধান্য দেয়া ও বর্তমান মাঠ-পার্কগুলোকে সকলের জন্য প্রবেশগম্য করে তোলা প্রয়োজন। কোভিড সংক্রমণের আতঙ্কে খেলাধূলা পরিহার না করে বরং কোন খেলাগুলো শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই খেলা যেতে পারে তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক পরিকল্পনা শহরের জনস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে পরিকল্পনা প্রণয়নে সমগ্র বাংলাদেশকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।  
হেলথ্ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা এর  আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, বিশ্বের প্রায় ২৩টি দেশে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন রয়েছে এবং এসকল সংস্থাগুলো তাদের দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। তামাকজাত দ্রব্য, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় এগুলোর উপর করারোপ করে সেই অর্থ হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যয় করা হয়। বাংলাদেশেও একটি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা যেতে পারে, যার লক্ষ্য হবে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, সড়ক দূর্ঘটনা হ্রাস, প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা, মনিটরিং ইত্যাদি।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, মানসিক প্রশান্তির জন্য কোন ঔষধ খেতে হয়না। এর জন্য প্রয়োজন পরিবারের সহযোগিতা ও সহনশীলতা। নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গৃহস্থালী কাজের মূল্যায়ন বড় ভ‚মিকা পালন করবে। পরিবারের ছেলে শিশুদের নারীদের যথাযথ সম্মান করতে শেখাতে হবে। মানসিক প্রশান্তির জন্য ছাদবাগান, বই পড়া, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ ইত্যাদির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। যেকোন উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও হিজড়া ব্যক্তিদের সমান গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

মিডিয়া কর্নার এর আরও খবর: