হেলেনা জাহাঙ্গীর অপকৌশলে ‘মাদার তেরেসা’, ‘পল্লী মাতা’ ও ‘প্রবাসী মাতা’ হিসেবে পরিচিতি পেতে চেয়েছিলেন

 প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০২১, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন   |   মিডিয়া কর্নার




র‌্যাব-৪ এর একজন পরিদর্শক বাদী হয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনের ৩৫, ৫৫ ও ৭৩ ধারায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর পল্লবী থানায়   আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়াহেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন।শনিবার (৩১ জুলাই) ভোরে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, ‌‘এ নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে রাজধানীর গুলশান ও পল্লবী থানায় মোট তিনটি মামলা দায়ের করলো র‌্যাব।’  রাজধানীর গুলশান থানায় আরও দুটি মামলার মধ্যে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায় একটি মামলা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫ বি এর ১(বি) ধারায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) ও ২৪(খ); ২০০১ সালের বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধনী/২০১০) এর ৩৪ (খ); ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন এর ৩৪(খ) ধারায় অপর একটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব। মাদক আইনে ছাড়াও বন্যপ্রাণী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণে আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। গ্রেফতার সাবেক আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর উচ্চাভিলাসী জীবন-যাপনের জন্যই নানারকম অবৈধ পথে চলতেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এর আগে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেফতার দেখানো হয়। এছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন আইপিটিভি জয়যাত্রার অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এসব সরঞ্জামের কোনোটিরই বিটিআরসির অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছে র‍্যাব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তার বাসা থেকে ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মাদক, একটি হরিণের চামড়া, একটি বন্য পশুর চামড়া, ১০ ধরনের বিদেশি চাকু, বিপুল সংখ্যক বিদেশি মুদ্রা, দুটি ওয়াকিটকি ও একটি লাল রঙের লাগেজ ভর্তি অবৈধ জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে গভীর রাতে তার জয়যাত্রা আইপি টিভি ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনেও অভিযান চালানো হয়।
উল্লেখ্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২৫ জুলাই দলটির মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেফতার হেলেনা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তার প্রায় ১২টি ক্লাবের সদস্যপদ রয়েছে।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর অপকৌশলের মাধ্যমে ‘মাদার তেরেসা’, ‘পল্লী মাতা’ ও ‘প্রবাসী মাতা’ হিসেবেও হেলেনা জাহাঙ্গীর পরিচিতি পেতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।  অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে ‘মাদার তেরেসা’, ‘পল্লী মাতা’ ও ‘প্রবাসী মাতা’ হিসেবে পরিচিতি পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন হেলেনা। তার পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘবদ্ধ চক্রটি এসব ভূয়া খেতাবের অপপ্রচার চালাত। বিভিন্ন দেশি সংস্থা ও ব্যক্তি থেকে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যা মানবিক সহায়তায় ব্যবহারের চেয়ে গ্রেফতারকৃতের খেতাব প্রচার প্রচারণায় বেশি ব্যবহার করা হতো।

অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত-সমালোচিত সেফুদার সঙ্গেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের লেনদেন ছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।  সেফুদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীর নজর কাড়তে চেষ্টা করেন। হেলেনা সেফুদাকে নাতি ডাকতেন। সেফুদার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তার সঙ্গে লেনদেনও ছিল হেলেনা জাহাঙ্গীরের।


মিডিয়া কর্নার এর আরও খবর: